চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের দ্বিতীয় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এতে এক নারীসহ ৪ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে তিনজন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন।
আহত হয়েছেন সোয়াতের দু’সদস্যসহ এক পুলিশ সদস্য। তাদের প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে তাদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
নিহত জঙ্গিদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সীতাকুণ্ড শহরের প্রেমতলা ওয়ার্ডের চৌধুরীপাড়ার ‘ছায়ানীড়’ নামের একটি দোতলা বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সোয়াত টিম।
এ অভিযানে অংশ নেন র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। এসময় বাইরে থেকে গুলি চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা, জবাবে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটান জঙ্গিরা।
এ সময় সাত থেকে আট মিনিট ধরে গুলির পাশাপাশি সাত-আটটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দোতলা বাড়িটিতে গতকাল বুধবার রাত থেকেই অভিযান চালানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ভেতরে আটকা পড়া ব্যক্তিদের নিরাপদে বের করে আনার জন্য আজ সকাল ছয়টায় অভিযান শুরু করা হয়। অভিযানকালে পাশের ভবন থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া গুলিতে এক জঙ্গি নিহত হয়। বাড়ির ভেতরে থাকা জঙ্গিরা আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে তিন জঙ্গি নিহত হয়।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি জানান, নিহত চার জঙ্গির মধ্যে দুজনের হাত, পা ও মুখমণ্ডল বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। তাদের চেহারা বোঝার উপায় নেই।
সবশেষ খবর পর্যন্ত ওই এলাকার পরিবেশ থমথমে রয়েছে। ছায়ানীড় ভবনে আটকে থাকা চার শিশুসহ ১৯ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৬-৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বুধবার দুপুর থেকে বাড়িটি ঘিরে রেখেছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাত ১১টা পর্যন্ত বাড়ির ভেতর থেকে তিন দফায় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছুড়ে মারেন জঙ্গিরা। এতে পুলিশের এক কর্মকর্তা আহত হন।
পরে পুলিশও জঙ্গি আস্তানা লক্ষ্য করে কয়েক দফা গুলি ছোড়ে। বিকেলে ও সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে থাকা জঙ্গিদের বের হবার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। তবে তাতে সাড়া দেননি জঙ্গিরা।
গেলো রাত ঘটনাস্থলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গিরা ভেতরে কাউকে জিম্মি করেনি। তার ধারণা, জঙ্গিরা নব্য জেএমবির সদস্য।
রাত পৌনে একটায় সোয়াত দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এর আগে ঢাকা থেকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল আসে। আর আগেই চট্টগ্রাম থেকে র্যাব, সোয়াট (স্পেশাল উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিকস) ও পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের সদস্যরা সেখানে যান।
বুধবার বিকেলে সীতাকুণ্ড পৌর এলাকার ৬ নম্বর নামার বাজার ওয়ার্ডের আমিরাবাদ এলাকায় ‘সাধন কুটির’ নামে এক বাড়িতে প্রথম জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। ওই বাসা থেকে সুইসাইড ভেস্ট, পিস্তল ও বিস্ফোরক তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
সেখান থেকে গ্রেপ্তার জঙ্গি দম্পতি জসিম ও আর্জিনার কাছ থেকে তথ্য পেয়ে ৫ নম্বর প্রেমতলা ওয়ার্ডের ‘ছায়ানীড়’ ভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালায়। পরে ওই অভিযানে যোগ দেন সোয়াট সদস্যরা।
‘সাধন কুটির’ নামে ওই ভবনের মালিক সুভাষ চন্দ্র দাশ জানান, তার বাড়িতে মোট ছয়টি ইউনিট। গেলো ২৭ ফেব্রুয়ারি টেলিফোনে জসিম নিজেকে কাপড় ব্যবসায়ী হিসেবে দাবি করে নিচ তলার একটি ইউনিট ভাড়া নিতে চান। ভাড়া ঠিক হবার পর নতুন ভাড়াটিয়া ২ মার্চ এসে একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) কপি দিয়ে যান।
তিনি আরো জানান, ২ মার্চ জসিম অনুরোধ করেন তার পরিবারের সদস্যরা ১২ মার্চ আসবে। এর আগে তার দুজন ছোট ভাই বাসায় থাকবে। সেটাতে আমি রাজি হই নাই। এর মধ্যে জসিম পরিবার নিয়ে ১২ মার্চ বাসায় ওঠেন। তার বাসার দরজা-জানালা দিনের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকত। রাতে লোকজন আসা-যাওয়া করতো।
তিনি জানান, এসব দেখে সুভাষের সন্দেহ হওয়ায় জসিমের এনআইডির কপি নিয়ে একটি কম্পিউটারের দোকানে যান তিনি। ওই দোকানদার ওয়েবসাইটে তথ্য যাচাই করে জানায়, ওই আইডি নম্বর অন্য নামের এক লোকের।
পরে তাদের বাসা ছেড়ে দিতে বলেন সুভাষ। কিন্তু তারা তাত রাজি হচ্ছিল না। তখন সামনের ঘরের খাটের নিচে এক জোড়া গামবুট পাই। ওই বুটের ভেতরে পিস্তল দেখে চিৎকার দিলে এলাকার লোকজন ছুটে আসে। পরে পুলিশও ঘটনাস্থলে আসে।
এসএস