ঢাকাশুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১

বৃক্ষমেলায় বাহারি গাছের ছড়াছড়ি

আরটিভি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪ , ০২:৪৭ পিএম


loading/img
ছবি : সংগৃহীত

প্রতিবছরের মতো এবারেও ঢাকার আগারগাঁওয়ের পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠে মাসব্যাপী শুরু হয়েছে জাতীয় বৃক্ষমেলা ২০২৪। দেখতে দেখতে সময় শেষের দিকে এসে পৌঁছেছে বৃক্ষমেলার। মেলা শুরু হয়েছিল ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে। মেলা চলবে ১৩ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন মেলা চলবে সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। বন বিভাগের আয়োজনে এই মেলা দেশের সর্ববৃহৎ বৃক্ষ বেচাকেনা ও প্রদর্শনী কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বিজ্ঞাপন

এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা; অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বৃক্ষ দিয়ে সাজাই দেশ, সমৃদ্ধ করি বাংলাদেশ।’

মেলায় প্রাকৃতিক আবহে সবকিছু সাজানো হয়েছে। যেন এক নতুন বিনোদনকেন্দ্রে রূপ নিয়েছে মেলা প্রাঙ্গণ। নানা শ্রেণিপেশার মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে জাতীয় বৃক্ষমেলা।

বিজ্ঞাপন

মেলার তথ্য কেন্দ্র বলছে, সোমবার পর্যন্ত ১১৮টি স্টলে বিক্রি হয়েছে ২০ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৪টি গাছ।

হোসেন নার্সারিতে বিক্রি হচ্ছে গোলাপজাম, কাউফল, বেত এবং ডেউয়া গাছ। এই স্টলে গোলাপজামের চারা রয়েছে ২ হাজার, কাউফলের দেড় হাজার, বেতের পাঁচশ এবং ডেউয়ার চারা রয়েছে ৩ হাজার। হোসেন নার্সারিতে গোলাপজামের চারা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, কাউফল ২০০, বেত গাছ ১৫০ আর ডেউয়া ২০০ টাকায়। 

বিজ্ঞাপন

হোসেন নার্সারির একজন বিক্রেতা জানান, এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০টি চারা। আগামী প্রজন্ম যাতে পুরনো গাছগুলো সম্পর্কে ধারণা পায়, সেজন্যই এগুলোর চাষ করা। এ গাছগুলো সচরাচর পাওয়া যায় না।

তিনি জানান, বিলুপ্ত এ গাছগুলো না চেনার কারণে চাহিদাও তেমন নেই। এখন অনেক মানুষ চেনেই না কাউফল কী, বেত কী। বৃক্ষমেলায় এ গাছগুলো সম্পর্কে মানুষকে জানাই, তাদের বলি কিনতে। যারা জানে, তারা খোঁজে বিলুপ্ত গাছগুলো।

ডিপ্লোমা কৃষিবিদ নার্সারিতেও বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এ নার্সারির একজন বিক্রয়কর্মী জানান, তাদের কাছে জহুরী চাপা ৫০ থেকে ১০০ টাকা, দেশি গাব ৫০ টাকা, বিলাতি গাব ৫০ থেকে ৫০০ টাকা, কাউফল ১০০ থেকে ৫০০ টাকা, কর্পূর গাছ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, অশোক ১০০ টাকা, সর্পগন্ধা ১৫০ টাকা, খৈয়াম ৫০ থেকে ২০০, বাবলা ৫০ থেকে ১৫০ এবং ‘মাছিন্দা’ গাছ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়।

তিনি বলেন, কিছু লোক আছে যারা পুরনো গাছ খোঁজে, তাদের জন্য আমরা এই গাছগুলো চাষ করি। তাদের নতুন প্রজাতির গাছ ফ্রিতে দিলেও নেবে না, এরা পুরাতনটাই খুঁজবে।

জাতীয় বৃক্ষ মেলায় হাজারো গাছের ভিড়ে খান নার্সারিতে একটি খেজুর গাছের কাছেই এসে দাঁড়াচ্ছিলেন দর্শনার্থীরা। কৌতুহলবশত দামও জিজ্ঞেস করছিলেন কেউ কেউ।

তবে বিক্রেতা যা দাম চেয়েছেন, তাতে ‘চক্ষু চড়কগাছ’ সবার; কারণ, গাছটির দাম চাওয়া হচ্ছে ৮ লাখ টাকা।

‘এত দামের কারণ কী’- গ্রাহকদের এমন প্রশ্নে এক বিক্রয়কর্মী জানান, সাত বছর বয়সের খেজুর গাছটি সৌদি আরবের ‘আল বারহি’ জাতের। ফলন বেশি হওয়ার কারণেই দাম বেশি। 

বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, গাছটির কারণে স্টলে ভিড়ও বেশি হচ্ছে। মানুষ আগ্রহ নিয়ে দেখছে, ছবি তুলছে। শেষ পর্যন্ত বিক্রি নাহলে তারা নার্সারিতেই ফেরত নিয়ে যাবেন।

ঢাকার আগারগাঁওয়ের পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠে জাতীয় বৃক্ষ মেলায় এই খেজুর গাছটিসহ বাহারি প্রজারি গাছ উঠেছে। সারি সারি গাছের ভিড়ে তমাল, সিভিট আর কুম্ভির মত সচরাচর দেখা না যাওয়া গাছও শোভা পাচ্ছে মেলায়।

বন বিভাগের স্টল থেকে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল হক জানান, আমাদের স্টলে বিভিন্ন প্রজাতির দূর্লভ ও বিলুপ্তপ্রায় বাঁশ, কাঠ ও ফলের গাছ রয়েছে। এসব গাছ মেলায় আগত দর্শনার্থীদের দেখানোর জন্য আনা হয়েছে। তবে মেলার শেষভাগে এসব গাছ বিক্রি করা হবে। 

বন বিভাগের স্টলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১ জুলাই থেকে এই স্টল থেকে বিভিন্ন গাছের চারা সাশ্রয়ী দামে কেনা যাবে। 

মেলায় বেসরকারি-বেসরকারি প্রায় শ খানেক স্টল অংশ নিয়েছে। এসব নার্সারিতে পাওয়া যাচ্ছে দেশ-বিদেশের নানা জাতের গাছ। তবে মেলায় এক চক্কর দিলে মনে হবে আম গাছের সংখ্যাই বেশি। আমসহ এসব গাছ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। 

এছাড়াও মেলায় মিলছে বিভিন্ন ঘর সাজানোর ইনডোর প্লান্ট, গাছ লাগানোর উপকরণ, গাছ বাঁচানোর সার, হরমোনসহ নানা সামগ্রী। এমনকি মেলায় কিনতে পাওয়া যাচ্ছে ঢাউস আকৃতির গ্রিন হাউজও। মেলায় গাছে পানি দেওয়ার নানান জিনিসও পাবেন। পাবেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি দেওয়ার স্প্রিংকলার সিস্টেমও। 

বৃক্ষমেলায় গাছ, চারা, বীজ কেনার জন্য যেমন অনেকেই আসেন তেমনি কেউ কেউ আসেন ঘুরতেও। ছুটির দিনে মেলা প্রাঙ্গনে পরিবার-পরিজনসহ নগরবাসীদের অনেকেই ঢু মারেন। 

বৃক্ষমেলায় বিক্রেতারা বলছেন, ক্যাকটাস এবং ফুল গাছের মত শোভাবর্ধনকারী গাছগুলো বিক্রি হচ্ছে বেশি। ফলের মধ্যে বেশি বিক্রি হচ্ছে আম গাছ।

এর আগে, বুধবার (৫ জুন) পলাশ ও বেল গাছের দুটি চারা রোপণের মাধ্যমে জাতীয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ বছর বর্ষা মৌসুমে সারাদেশে ৮ কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার চারা রোপণ করা হবে।

বুধবার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন ২০২৩ ও ২০২৪, জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৩, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০২২ ও ২০২৩ এবং সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের মধ্যে লভ্যাংশের চেক বিতরণ করা হয়েছে।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |