সরকার পতনের পর পদত্যাগ করলেন যারা
শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পাল্টে গেছে দেশের সরকার। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এরপর স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় প্রতিটি অঙ্গনেই চলছে পদত্যাগের মিছিল।
এর আগে, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও গণহত্যার অভিযোগে এনে তাদের বরখাস্ত অথবা পদত্যাগ এবং গ্রেপ্তারের দাবি জানান ছাত্র-জনতা। এর প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেই চলেছেন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রধান বিচারপতি ও পাঁচ বিচারপতি : শনিবার (১০ আগস্ট) দুপুরে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পদত্যাগ দাবিতে শনিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এরপর দুপুরে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগপত্র আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে এসেছে। আমরা সেটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেব।
বিকেলে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও কাশেফা হোসেন পদত্যাগ করেন। সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানায়, এই দুই বিচারপতি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। তারা ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম শনিবার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যায় পদত্যাগ করেছেন।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক: প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালকের পদ থেকে অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী পদত্যাগ করেছেন। শনিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে বাংলা একাডেমির পরিচারক ড. সরকার আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে, চলতি বছরের ২৪ জুলাই বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন হারুন-উর-রশীদ। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তা: শুক্রবার (৯ আগস্ট) পদত্যাগ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। পদত্যাগ করেছেন। এর আগে গত বুধবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকে বিক্ষোভ হয়েছে। ওই দিন একদল কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, চার ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা ও আর্থিক গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধানের পদত্যাগ দাবি করে মিছিল করেন। তারা একজন ডেপুটি গভর্নরকে সাদা কাগজে সই করতে বাধ্য করেন এবং আরও চারজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে পদত্যাগে রাজি করান।
অ্যাটর্নি জেনারেল ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল: গত বুধবার রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর পদত্যাগ করেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগ করার বিষয়টি এস এম মুনীর নিজেই গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব: শেখ হাসিনার সময়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের দায়িত্ব পালন করা মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে তাকে সরকারি চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার এক আদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, মুখ্য সচিব পদে তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবশিষ্ট মেয়াদ বাতিল করা হয়েছে।
আইজিপি: গত মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের চুক্তি বাতিল করে নতুন আইজিপি হিসেবে মো. ময়নুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাবেক আইজিপি আত্মগোপনে আছেন।
সালাম মুর্শেদি: বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সিনিয়র সহসভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী। বৃহস্পতিবার রাতে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে সালাম মুর্শেদীর পদত্যাগের কথা জানিয়েছে দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থাটি। পদত্যাগের কারণ হিসেবে বিবৃতিতে ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সাত হলের প্রভোস্ট: শনিবার (১০ আগস্ট) পদত্যাগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল। তিনি ছাড়াও পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন সাতটি হলের প্রভোস্ট।
শাবিপ্রবি উপাচার্য: শনিবার (১০ আগস্ট) আরো পদত্যাগ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কারণে আমার পদ থেকে পদত্যাগ করছি। আজকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আমার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।’ উপাচার্য বলেন, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের প্রভোস্ট, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা পদত্যাগ করেছেন। বাকি যারা আছে সবাই পদত্যাগ করবেন।
বেরোবি উপাচার্য: বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) পদত্যাগ করেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. হাসিবুর রশীদ। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় রাষ্ট্রপতির সচিবের কাছে উপাচার্য তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।
রাবি উপাচার্য : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ ঊর্ধ্বতন ২৯ প্রশাসক ও কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) উপাচার্যসহ কর্মকর্তারা তাদের পদত্যাগপত্র জমা দেন।
মন্তব্য করুন