পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে গণিত বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতা, অনিয়ম ও একই বিভাগের চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিতের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগীরা।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে পাবনা প্রেসক্লাবের ভিআইপি সেমিনার হলরুমে পাবিপ্রবির গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে দুজন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আমাকে সদস্য হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু সকালে নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত হতে গেলে ভিসির ইশারায় তার পেটুয়া কর্মকর্তা ও কর্মচারী বাহিনী আমাকে নিয়োগ বোর্ডের কক্ষে প্রবেশে বাধা দেয় এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে ওই বিল্ডিং থেকে বের করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, ভিসি স্যারের মেয়াদ একেবারেই শেষ পর্যায়ে। যাওয়ার সময়ে তিনি নানান অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতিসহ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করে যাচ্ছেন। নিজের খেয়াল খুশিমতো অনিয়ম ও অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অযোগ্য, অদক্ষ জনবল নিয়োগ, স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করছেন। এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলেই তার ওপর নেমে আসে দুর্বিসহ স্বেচ্ছাচারী আচরণ। দুর্ব্যবহারের পাশাপাশি নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম জানান, গত বছরের ১৬ জুন নিয়োগ বোর্ডে মেধা যাচাই ও যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের না নিয়ে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতির দায়িত্বে থেকে ভিসি স্যার তার আপন ভাতিজি কানিজ ফাতেমাকে প্রথম শ্রেণির সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ দিয়েছেন। একই পদে আরও চারজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র অর্থের বিনিময়ে। অথচ, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের নামে নাটক সাজিয়ে সেই পরীক্ষার কোনো রোস্টার টানানো হয়নি।
তিনি বলেন, ভিসি প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলী অনিয়ম ও দুর্নীতি করে পুরোপুরি নাটক সাজিয়ে বেশ কয়েকটি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পাবিপ্রবি ভিসি প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলী বলেন, অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে সংবাদ সম্মেলন করবেন।
আপন বড় ভাইয়ের মেয়েকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কানিজ ফাতেমার নিয়োগে মৌখিক পরীক্ষার সময় আমি ঢাকায় ছিলাম। তাই এ নিয়োগে অস্বচ্ছতার বিষয়টি সঠিক নয়।
নিজস্ব পেটুয়া বাহিনী দিয়ে গণিত বিভাগের চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিতের বিষয়ে ভিসি বলেন, নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হলেও তার স্ত্রী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করায় তাকে বিধিমোতাবেক নিয়োগ বোর্ডে রাখা সম্ভব হয়নি। যে কারণে অফিস স্টাফরা তাকে নিয়োগ বোর্ডে ঢুকতে না দিয়ে চলে যেতে বলেছেন।
এ বিষয়ে গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, যেহেতু লিখিত পরীক্ষায় আমার স্ত্রী উত্তীর্ণ হননি। সেহেতু মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত থাকার অধিকার আমার আছে। আমার বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ হবে আর আমি সেখানে থাকতে পারব না এমন কোনো বিধি নেই।
তিনি বলেন, আগে থেকেই শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতা, অনৈতিক লেনদেন এবং মেধার বাইরে অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হবে এমন আঁচ করতে পেরেই আমি বিধি অনুসারে লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম ভিসি স্যারকে। কিন্তু তিনি আমার পরপর দুটি আবেদনের কোনো সাড়া দেননি। উল্টো অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক্সপার্ট নিয়ে এসে তড়িঘড়ি করে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন।
লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়ে ড. হারুন বলেন, শিক্ষক পরিষদ কৌশলে ভেঙে দিয়ে আর অনুমোদন দেননি ভিসি স্যার। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের দিনে আমি আমার সহকর্মীদের পাশে পাচ্ছি না। তবে এ ঘটনায় আমি থানায় মামলা করব। পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি বরাবর অভিযোগ দায়ের করব।
ভিসি প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো কাজ করা হয়নি। যে বা যারাই অভিযোগ করছেন, তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারেননি বা আমাকে ভিন্নভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ায় একের পর এক উল্টোপাল্টা ও মনগড়া অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করার পাঁয়তারা করছেন।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পাবিপ্রবি ভিসি প্রফেসর এম রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে ১০১টি দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগের তদন্ত ও বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে উদ্ধারের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এককভাবে প্রতীকী অনশন করেন বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. এম আবদুল আলীম। এ ছাড়াও একই দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। ইতোমধ্যে ভিসির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর মধ্যে বেশ কিছুর সত্যতা পেয়েছে ইউজিসি ও তদন্ত কমিটি।
এমআই