আশ্রয়ণ প্রকল্পে ধর্ষণ, শাস্তি ১ হাজার টাকা!
পাবনার একটি সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে গৃহবধূকে ধর্ষণে অভিযুক্তকে এক হাজার টাকা জরিমানা, নাকে খত এবং জুতাপেটায় মিমাংসা করে দিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান। পাশাপাশি, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারকে মামলা বা অন্য কোনো পদক্ষেপ না নিতেও হুমকি দেন তিনি। তবে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে জেলার বেড়া উপজেলার চাকলা ইউনিয়নের ঈদগাহ মাঠে অবস্থিত চাকলা আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরদিন স্থানীয় চাকলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরদার স্থানীয় সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে অভিযুক্তকে এ কথিত সাজা দেন।
সূত্র জানায়, বুধবার দুপুরে শফিকুল ইসলাম শফিক ভুক্তভোগীকে ধর্ষণ করেন। ভুক্তভোগীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ঘটনা টের পেলে অভিযুক্ত পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার চাকলা ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বৈঠক হয়। সেখানে চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরদারের নির্দেশে অভিযুক্তকে নাকে খত, জুতাপেটার পাশাপাশি এক হাজার টাকায় ঘটনা মিমাংসা করা হয়। এ নিয়ে পরবর্তীতে কোনো মামলা বা পদক্ষেপ না নিতেও ভুক্তভোগীদের শাসিয়ে দেন চেয়ারম্যান।
বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। লিখিত অভিযোগ করে ভুক্তভোগী পরিবার। যার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার রাতে অভিযুক্ত শফিককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
ভুক্তভোগীর স্বামী বলেন, ‘মাত্র এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমার স্ত্রীর ইজ্জতের মূল্য কি এক হাজার টাকা? সেখানে আমাকে অনেক ভয় দেখানো হয়েছে। চেয়ারম্যান বলেছে- ‘তু্ই যদি মামলা-মোকাদ্দমায় যাস তাহলে আমি বলে দেব তুই তোর স্ত্রীকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করাস’, এজন্য আমি প্রথমে পুলিশের কাছে যায়নি। আমি আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ ও তামাসার বিচারের বিচার চাই।’
অভিযোগ অস্বীকার করে চাকলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরদার বলেন, ‘আমার কাছে উভয়পক্ষ আসলে আমি স্থানীয় মেম্বরদের সহযোগিতায় একটি সালিশি বৈঠক করেছি। সেখানে ধর্ষণের কোনো অভিযোগ ছিল না। তারপরও যেহেতু একজন নারীর ঘরে বিনা অনুমতিতে ঢুকেছিল এজন্য তাকে (অভিযুক্ত) কানধরে উঠবোস করানো হয়েছে, কিন্তু কোনো জরিমানা করা হয়নি। যে ১ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে সেটা জরিমানা নয়, ওটা গ্রাম্যপুলিশদের খরচ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। তখন উভয় পক্ষ আমাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিল। এখন তারা মানছে না।’
তিনি বলেন, ‘একটি কুচক্রি মহল ও আমার প্রতিপক্ষের লোকজন আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছড়াচ্ছে। যেহেতু তারা সিদ্ধান্ত না মেনে আইনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন আইনের মাধ্যমে যা হয় তা হবে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
এ বিষয়ে বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর গত শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম শফিককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আমরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন