ঘূর্ণিঝড় রেমাল
বরগুনায় বাঁধ ভেঙে ২৭ গ্রাম প্লাবিত
ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানির তোড়ে আমতলীর বালিয়াতলী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর প্রভাবে এরইমধ্যে বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার ২৭ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুই উপজেলার ২৫৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে উপজেলা নির্বাহী অফিস। বন্ধ রয়েছে আমতলী-বরগুনা রুটের ফেরি চলাচল।
রোববার (২৬ মে) স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
আমতলীর আরপাঙ্গাশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সোহেলী পরভীন মালা বলেন, ‘পায়রা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পশুর বুনিয়া গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৩০০ ফুট ভেঙে গেছে। এর ফলে বালিয়াতলী ও পশুরবুনিয়া গ্রাম ২-৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে বোরো ধানের খেত।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে এ বাঁধ ভেঙে গেছে।’
পশুরবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘পাউবো কর্মকর্তা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি করেছেন। তারা দায়সারাভাবে বাঁধ নির্মাণ করেছেন।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হিমেল বলেন, ‘আমতলীর পশুরবুনিয়া বাঁধ দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তালতলী উপজেলার তেতুর বাড়িয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ৩ থেকে ৪ জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে সেখানের কয়েক শ’ পরিবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’
জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে আমতলীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের আরপাঙ্গাশিয়া, তারিকাটা, লোছা, বৈঠাকাটা, বাসুগি, নয়াভাঙ্গলী, ফেরিঘাট, খাদ্যগুদাম সংলগ্ন চর, ওয়াপদা চর, পশ্চিম ঘটখালী, আংগুলকাটা, গুলিশাখালীর জেলেপাড়া তলিয়ে গেছে। তালতলী উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের মরানিদ্রা, আগাপাড়া, মেনিপাড়া, গোড়াপাড়া, অংকুজানপাড়া, মোয়াপাড়া, নামিশেপাড়া, ছোবাহাপাড়া, খোট্টারচর, জয়ালভাঙ্গা, আশারচর, তেতুল বআড়িয়া, জয়ালভাঙ্গা, সকিনা, আমখোলা গ্রামও প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি মাপক মো. আবুল কালাম বলেন, ‘রেমাল’-এর প্রভাবে পায়রা নদীতে আজ সকাল থেকে ৪-৫ ফুট বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত আনোয়ার তুমপা জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর প্রভাবে তেতুল বাড়িয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শনিবার বিকেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হয়। এ ছাড়া ‘রেমাল’ মোকাবিলায় উপজেলায় ৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মাদ আশরাফুল আলম বলেন, ‘যেখানে বাঁধ ভেঙে গেছে সেখানে জিওব্যাগ ফেলার জন্য পাউবো এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার ২২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আমতলী-বরগুনা রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।’
মন্তব্য করুন