• ঢাকা বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১
logo

প্রাণ ভিক্ষা চেয়েও গুলি থেকে রক্ষা পাননি আমার প্রতিবন্ধী স্বামী

আরটিভি নিউজ

  ২৮ জুলাই ২০২৪, ২১:১০
সংগৃহীত ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে কারফিউ চলাকালে বুকে ও পায়ে গুলি লেগে নিহত হয়েছেন রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার পূর্ব রতনদিয়া গ্রামের মৃত মেহের শেখের ছেলে কোরবান শেখ (৪৯)।

রোববার (২৮ জুলাই) কোরবান শেখের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শোকের মাতম চলছে।

মো. কোরবান শেখের স্ত্রী শিল্পী খাতুন আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমার স্বামী কোনো রাজনীতি করতেন না। তিনি কোনো আন্দোলনে যাননি। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিলেন, অসুস্থ ছিলেন। তিনি দোকান বন্ধ করে বাসায় ফিরছিলেন। তিনি হাতজোড় করে কাকুতি-মিনতি করে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছিলেন। তারপরও তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। আমার স্বামীর স্বপ্ন ছিল, ছেলেকে বিসিএস ক্যাডার আর মেয়েকে ব্যাংকার বানাবেন। তার স্বপ্ন পূরণ হলো না। আমার ছেলে-মেয়েকে এখন কে দেখবে?’

কোরবান শেখের ছেলে রমজান শেখ বলেন, ‘গত ২০ জুলাই সকালে কারফিউয়ের মধ্যে অনেক দোকানিই তাদের দোকান খোলেন। আব্বুও সকাল ৯টার দিকে দোকান খোলেন। আমাদের বাসা থেকে আব্বুর দোকানে হেঁটে যেতে ৫ থেকে ৭ মিনিটের দূরত্ব। দুপুর ১টার দিকে গোলাগুলির শব্দ শুনে আমার বোন আব্বুকে ফোন করে বাসায় চলে আসতে বলে। দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে বাজারের দোকানি আমার এক চাচা ফোন করে আমাকে জানান যে আমার আব্বুর গুলি লেগেছে। আমি দৌড়ে বাজারে গিয়ে দেখি আমার চাচাসহ কয়েকজন দোকানি আমার আব্বুকে কোলে করে নিয়ে আসছেন। আমরা দ্রুত তাকে পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে আব্বুকে ভর্তি করেনি। পরে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসক আব্বুকে মৃত ঘোষণা করেন।’

তিনি বলেন, ‘পরে আমি জানতে পারি দুপুরে হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ শুনে আব্বু দোকান বন্ধ করে হেঁটে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন। সামনে গুলি করা দেখে আব্বুসহ কয়েকজন দোকানি মাছ বাজারে বরফ কলের গেট আটকে ভেতরে আশ্রয় নেন। বরফ কলের গেট ভেঙে ভেতর ঢুকে তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে আব্বুসহ সকলেই আহত হন। আব্বুর বুকে ও পায়ে দুটি গুলি লাগে। এছাড়া বুকে ও মুখে অসংখ্য ছড়ড়া গুলি লাগে। পরে আমার আব্বু মারা যান। ওইদিনই রাত ৯টার দিকে আব্বুর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এনে রাত ১১টার দিকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।’

কোরবান শেখের মেয়ে মিতু আক্তার বলেন, ‘আমার আব্বুর স্বপ্ন ছিল ভাইয়াকে বিসিএস ক্যাডার আর আমাকে ব্যাংকার বানাবেন। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমার আব্বু অসুস্থতা নিয়েও হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে আমাদের পড়ালেখা করাচ্ছিলেন। আমার আব্বু শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিলেন, তিনি হাঁটতে পারতেন না। তিনি কোন আন্দোলনেও যাননি। তাকে দেখে যে কোনো মানুষের মায়া হওয়ার কথা। তারা কিভাবে পারলো আমার অসুস্থ আব্বুকে গুলি করে মারতে? আমার আব্বু পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। সরকারের কাছে আমি আমার আব্বুর হত্যার বিচার চাই। আর আমার ও ভাইয়ার কর্মসংস্থান চাই।’

জানা গেছে, জীবিকার তাগিদে ১৮ বছর আগে দুই শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার সাভারে আসেন কোরবান শেখ। সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে মাছবাজার এলাকায় তার মুরগির দোকান ছিল, স্মরণিকা এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। তার ছেলে রমজান শেখ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগে অনার্স চতুর্থ বর্ষে আর মেয়ে মিতু আক্তার ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ প্রথম বর্ষে পড়েন।

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
আলোচনায় সায়ানের নতুন গান ‘এটাই আমার রাজনীতি’
শিক্ষকরা রাজনীতিতে জড়ালে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা: উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন
স্বৈরাচারের লোকদের কেউ দলে ভেড়ালে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে: রিপন
আমরা রাজনীতি করি মানুষের সেবার জন্য: মঈন খান