ডিপ ফ্রিজ খুলে হাত-পা বাঁধা মায়ের মরদেহ দেখলেন ছেলে

আরটিভি নিউজ

সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪ , ১২:৪৫ পিএম


ডিপ ফ্রিজ খুলে হাত-পা বাঁধা মায়ের মরদেহ দেখলেন ছেলে

বগুড়ার ধুপচাঁচিয়ায় বাসায় ঢুকে উম্মে সালমা (৪৭) নামে এক গৃহবধূকে হত্যার পর ডিপ ফ্রিজে রেখেছিলেন দুর্বৃত্তরা। পরে নিহতের স্বজনরা খোঁজাখুঁজির পর ডিপ ফ্রিজ থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১০ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে ‘আজিজয়া মঞ্জিল’ নামে ওই বাড়িতে নৃশংস ওই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ সাড়ে ৩টার দিকে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল করার জন্য প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

নিহত উম্মে সালমা  (৪৭) দুপচাঁচিয়া ডিএস ফাজিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ আজিজার রহমানের স্ত্রী। মাদরাসা শিক্ষক আজিজার রহমান দুপচাঁচিয়া উপজেলা মসজিদের খতিব এবং ইমাম-মুয়াজ্জিন সমিতির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়া তিনি ‘আজিজিয়া হজ কাফেলা’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরও কর্ণধার।

বিজ্ঞাপন

হত্যাকাণ্ডের পর বাড়িতে গিয়ে ঘরের ভেতরে কাপড়-চোপড় এলোমেলো এবং মেঝেতে একটি কুড়াল পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে আলমারি কাটার চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে কুড়াল দিয়ে আলমারি কাটার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে প্রকাশ্য দিনের বেলায় জনবহুল এলাকায় স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী শিক্ষক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের বাড়িতে ডাকাতদের প্রবেশ এবং তার স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখার মত নৃশংস ঘটনায় ওই এলাকায় রীতিমত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

দুপচাঁচিয়ার হাটসাজাপুর বিদ্যালয়ের শিক্ষক মঈন খান জানান, মাদরাসা শিক্ষক আজিজার রহমানের ৩ সন্তান। বড় ছেলে এবং মেয়ে ঢাকায় থাকেন। ছোট ছেলে ২৪ বছর বয়সী সাদ বিন আজিজার রহমানই শুধু বাবা-মার সঙ্গে দুপচাঁচিয়ায় বসবাস করেন। সাদ ডিএস ফাজিল মাদরাসার কামিল শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। 

স্কুলশিক্ষক মঈন খান আরও জানান, দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদরের সিও অফিস বাসস্ট্যান্ড থেকে ১০০ মিটার পশ্চিমে বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়ক-সংলগ্ন ৪ তলা বাড়ি ‘আজিজিয়া মঞ্জিল’ এর তৃতীয় তলায় সপরিবারে বসবাস করেন আজিজার।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সাংবাদিক গোলাম ফারুক জানান, মাদরাসা শিক্ষক আজিজার রহমান এবং ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজার প্রতিদিনকার মতো রোববার সকাল ৯টার মধ্যে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যান। 

মাদরাসা শিক্ষক আজিজার রহমান সাংবাদিকদের জানান, মাদরাসায় পৌঁছার পর সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন। তার ছোট ছেলে সাদ বিন আজিজার জানান, তিনি দুপুর ২টার পর বাড়িতে গিয়ে প্রধান ফটক তালাবদ্ধ দেখেন। পরে বিকল্প চাবি দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢোকার পর ঘরের সবকিছু এলোমেলো দেখতে পান। ডিপ ফ্রিজের দিকে তাকিয়ে সেটিকে ভালোভাবে লাগানো হয়নি বলে মনে হয়। এরপর সেটি খোলার পর তার ভেতরে মায়ের হাত বাঁধা লাশ দেখতে পান। 

বিকল্প চাবি দিয়ে প্রধান ফটকের তালা খোলা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সাদ বিন আজিজার সাংবাদিকদের বলেন, মা অনেক সময় বাইরে গেলে তালা দিয়ে যান। তবে তার ফিরে আসা পর্যন্ত যাতে অপেক্ষা করতে না হয় সেজন্য একটি করে বিকল্প চাবি তাদের দেওয়া হয়। সেই বিকল্প চাবি দিয়েই আমি তালা খুলেছি।

নিহত উম্মে সালমার স্বামী আজিজার রহমানের ধারণা, সকাল ১০টার পর থেকে দুপুর ১টার মধ্যেই ওই হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে। ডাকাতরা কোনো টাকা-পয়সা মা মালামাল লুট করেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, স্টিলের আলমারি কুড়াল দিয়ে কাটার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সেটা পারেনি। তাই এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে টাকা-পয়সা বা স্বর্ণালংকার নিতে পারেনি।

মাদরাসা শিক্ষক আজিজার রহমানের ৪ তলা বাড়ির প্রথম তলার বাসিন্দা মাসকুরুর রহমান এবং সাইদুল হক জানান, ঘটনার সময় তারা বাড়িতে ছিলেন না। অন্য প্রতিবেশীরা বলছেন তারা কোনো চিৎকার বা শব্দ শোনেননি। 

দুপচাঁচিয়া নাগরিক কমিটির সভাপতি আব্দুল বাছেদ জানান, দিনে-দুপুরে বাড়িতে ঢুকে এভাবে একজন পর্দানশীন নারীকে হত্যা এবং হত্যার পর তার লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ঘটনায় আমরা রীতিমত শঙ্কিত। আমরা এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

পুলিশের দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘি সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাজরান রউফ জানান, ডিপ ফ্রিজের মধ্যে উম্মে সালমার লাশ হাত ও পা বাঁধা অবস্থায় ছিল। তবে গলায় কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। ময়নাতদন্তের জন্য আমরা লাশটি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছি। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে দুপুর ১টার দিকে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। তবে বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা বা স্বর্ণালংকার খোয়া যায়নি।

আরটিভি/এফআই/এসএ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission