• ঢাকা বুধবার, ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১
logo

হাতিয়ার চানন্দী ইউনিয়ন

নেই প্রশাসনের প্রত্যক্ষ তদারকি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি

হাতিয়া প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:২০
ছবি : আরটিভি

চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে করা হয় হামলা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে করা হয় জখম। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা শেষে মামলা করেন ভুক্তভোগী। এবার মামলা করার দায়ে করা হয় এলাকাছাড়া। অপহরণ করে জিম্মি করে রাখা হয় বাদীকে। দীর্ঘ একমাস এলাকার বাহিরে অবস্থান করতে হচ্ছে পুরো পরিবারকে। সহযোগিতা চেয়েও নদীর ওপারে হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা পাননি তিনি। এটি নোয়াখালী হাতিয়ার ২নং চানন্দী ইউনিয়নের বালু ব্যবসায়ী ফরহাদ উদ্দিনের বক্তব্য।

সম্প্রতি ফরহাদ উদ্দিনের (৫০) সঙ্গে দেখা হয় চানন্দী ইউনিয়নের পশ্চিম পাশে দরবেশ বাজারে। সাংবাদিকদের দেখে নিজের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কাঁদতে কাঁদতে সঙ্গে থাকা আহত ছেলের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্নগুলো দেখান। এ সময় এলাকার অনেকে ফরহাদের পক্ষে সমবেদনা জানাতে দেখা যায়। ফরহাদের বাড়ি চানন্দী ইউনিয়নের করিম বাজারের পাশে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে এখনো বাড়ি যেতে পারছে না।

ফরহাদ জানান, অনেকদিন থেকে বালুর ব্যবসা করে আসছেন তিনি। হাসিনা সরকার পতনের পর বহিরাগত ও স্থানীয় মিলে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ তার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সন্ত্রাসীরা করিম বাজার এসে সাউন্ড-বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সব অন্ধকার করে ফেলে।

এ সময় বাজারের একটি দোকানে থাকা তার ছেলে ও নুরউদ্দিন (২৫) নামে এক প্রতিবেশীকে পিঠিয়ে আহত করে। সন্ত্রাসীরা তার ছেলের মাথায় কুপিয়ে আহত করে। প্রতিবেশী নুরউদ্দিন বাচাতে এলে তাকে পিঠিয়ে ডান হাত ভেঙে দেয়। দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। একমাস পর এসে ৫ নভেম্বর ৮ জনকে আসামি করে হাতিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য থানাকে আদেশ দেন। কিন্তু একমাস পার হয়ে গেলেও পুলিশ কোনো আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

ফরহাদ আরও জানান, এদিকে মামলা করার পর সন্ত্রাসীরা তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। কিছুদিন আগে সন্ত্রাসীরা তাকে বাজারে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে থানারহাট বাজার পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। চানন্দী ইউনিয়নটি হাতিয়া উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এখানে কোন ঘটনা হলে মামলা করতে নদী পাড়ি দিয়ে হাতিয়া উপজেলা সদরে যেতে হয়। ইউনিয়নের পশ্চিম পাশে থানার হাট এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁড়ি আছে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর এলাকায় পুলিশ সদস্যদের তেমন একটা কার্যক্রম নেই।

স্থানীয়রা জানান, শুধু ফরহাদ উদ্দিনের সঙ্গে নয় পুরো ইউনিয়নে ত্রাসের রাজত্ব চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি না থাকায় সন্ত্রাসীরা এসব কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। ৫ আগস্টের পর দেশের পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে একটি গ্রুপ পুরো চরের নিয়ন্ত্রণ করছেন। এদের অনেকের বাড়ী পার্শ্ববর্তী সূবর্ণচর উপজেলায়। তারা প্রতিদিন সন্ধ্যার পর করিম বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সাউন্ড বোমার বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। বেশকয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে তারা এলাকায় মোহড়া দেন। তাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে থাকে।

৫ আগস্টের পর সারা দেশে আইন শৃঙ্খলা চরম অবনতি হলে সরকার সেনা ও নৌবাহিনীকে মাঠে নামায়। দেওয়া হয় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা। আর হাতিয়া উপজেলার জন্য দেওয়া হয় নৌবাহিনী, এই বাহিনীর ক্যাম্পটি স্থাপন করা হয় হাতিয়ার মূল ভূখণ্ডে উপজেলা সদরে। এতে হাতিয়ার মূল ভূখণ্ডের ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় নৌবাহিনীর তদারকিতে নিয়ন্ত্রণে আসলেও অরক্ষিত থেকে যায় চানন্দী ও হরনী ইউনিয়ন।

চানন্দী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের নাসিরপুর গ্রামে বসবাস করেন কৃষক নবির উদ্দিন। নবীর জানান, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে ৮ জনের সংসার। গত মাসের প্রথম দিকে একদল সন্ত্রাসী তার বাড়িতে হামলা করে। এতে প্রাণ ভয়ে নবির ও দুই ছেলে পালিয়ে যায়। পরে সন্ত্রাসীরা তাদের খোঁয়াড়ে থাকা দুইটি গরু নিয়ে যায়। এদিগে বাড়ির বাহিরে অবস্থান করা ছেলেরা উপার্জনের জন্য মাছধরা ট্রলারে চুক্তিভিত্তিক কাজ নেয়। কিছুদিন পর নবিরের বড় ছেলে এক-সন্তানের জনক বজ্রপাতে মাছধরা ট্রলারে নিহত হন।

নবীর আরও জানান, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেকের বাড়ি সূবর্ণচর উপজেলায়। রকি, মাসুদ কেরানি, ফারুক ডাক্তার সহ অনেকে আছেন যাদের বাড়ি হাতিয়ার সীমানা এলাকায়।

বেলাল উদ্দিন চানন্দী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক প্রশাসনিক মেম্বার। ২০০৮ সালে ইউনিয়ন ঘোষণার পর দীর্ঘ ১৬ বছরের প্রশাসনিক মেম্বার ছিলেন তিনি। আলাপ কালে বেলাল জানান, পুরো ইউনিয়নে নৈরাজ্য চলছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম একেবারেই অনুপস্থিত। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগে ওঁত পেতে থাকা সীমান্ত এলাকার সন্ত্রাসীরা পুরো এলাকায় রাজত্ব করছে। কেউ কেউ বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে এসব অপকর্ম করছে। এখানে বিএনপির শক্ত কোনো সাংগঠনিক কাঠামো নেই। এই সুযোগে যে যার মত করে বিশৃঙ্খলভাবে কার্যক্রম করছে। সারা দেশে নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনী আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। অথচ এই ইউনিয়নে ৫ আগস্টের পর থেকে আজ পর্যন্ত এই বাহিনীর কোন সদস্য বা টিম আসেনি। অনেকে হাতিয়া উপজেলা সদরে গিয়ে নৌবাহিনীর ক্যাম্পে আইনগত সহায়তার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু নদী পাড়ি দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে বাহিনীর কেউ এলাকায় আসেনি।

চানন্দী ইউনিয়ন পূর্ব শাখার সভাপতি মাহবুবের রহমান জানান, দলের মধ্যে কিছু অনুপ্রবেশকারী যোগ দিয়ে এসব অপকর্ম করছে। এছাড়া চানন্দী ইউনিয়নটি বিশাল বড় এরিয়া। এর একপাশে সূবর্ণচর উপজেলা। সেখান থেকেও সন্ত্রাসীরা এসে অপকর্ম করছে।

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক খোকন বলেন, চানন্দী ইউনিয়নসহ হাতিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা কাজ করছি। চানন্দীতে বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী অনিয়ম করে আসছে। এই বিষয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের আগেও সতর্ক করা হয়েছে। কেউ যেন দলের নাম ভাঙিয়ে বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, হরনী ও চানন্দী নামে দুটি ইউনিয়ন নদীর ওপারে। মূল ভূখণ্ড থেকে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। আমাদের যানবাহন ও জনবল সংকট রয়েছে। ৫ আগস্টের পর পুলিশ প্রশাসন একটু ঝিমিয়ে কাজ করছে। এই সুযোগে অন্য উপজেলার কিছু লোক এসে এখানে অপকর্ম করছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।

আরটিভি/এএএ

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
হাতিয়ায় দুর্ধর্ষ ডাকাতি, টাকা-স্বর্ণালংকার লুট
প্রবীর মিত্রের অবস্থার অবনতি, আইসিইউতে স্থানান্তর
হাতিয়ায় আলোর মশালের শীতবস্ত্র বিতরণ
এবার হাসপাতালে ভর্তি প্রবীর মিত্র, শারীরিক অবস্থার অবনতি