• ঢাকা বুধবার, ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১
logo

চট্টগ্রামে সমন্বয়কের ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির কল রেকর্ড ফাঁস, যা জানা গেল

আরটিভি নিউজ

  ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩:৪২
ছবি: সংগৃহীত।

চট্টগ্রাম নগরে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে সম্প্রতি মেলার আয়োজন করতে যাওয়া এক নারী উদ্যোক্তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এক সমন্বয়ক রিজাউর রহমানের বিরুদ্ধে। চাঁদা দাবির ‘দরকষাকষির’ ৬ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এরপর এ নিয়ে শহর জুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। তবে ওই সমন্বয়ক অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

রিজাউর রহমান চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বাসিন্দা। তিনি চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। এদিকে নারী উদ্যোক্তা আফরোজা সুলতানা পূর্ণিমা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ঘনিষ্ঠ। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর আঞ্জুমান আরা তার স্বামীর বড় বোন।

৬ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের কল রেকর্ডে যা আছে:

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অডিও কলরেকর্ডের শুরুতেই যুবদল নেতা আবিরকে সমন্বয়ক রিজাউর বলেন, ‘আমি হচ্ছে যে, বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলছি বুঝছেন। এখন হচ্ছে যে উনি পুরা বিষয়টা ওভারলুক করে আমাকে একটা অ্যামাউন্ট বলছে। তো লাখ দশেকের কথা বললো। যেটা হইলে সবাইকে ম্যানেজ করে জিনিসটা ওকে করে দিবে আরকি।’

উত্তরে আবির তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘কত বলতেছে যে?’ রেজাউর আবার জবাব দেন, ‘লাখ দশেকের মতো বলতেছে।’ বিস্মিত হয়ে আবির আবারও রেজাউরকে প্রশ্ন করেন, ‘কতো বলছে?’ রেজাউর বলেন, ‘টেন-এর কথা বলছে।’

১০ লাখ টাকার কথা শুনে আবির বলেন, ‘কী বলো? ওখানে পাঁচ হাজার টাকা করে ৫০টা হবে না (দোকান)… মাঠের তিনভাগের একভাগ। দশ লাখ টাকা কোত্থেকে দেবে রেজা বলো?’

বড় ভাইয়ের বরাত টেনে রেজাউর বলেন, ‘না আমি তো হচ্ছে আপনাদের অ্যামাউন্টটা কতো জানি না। পার স্টল (দোকানপ্রতি) কতো জানি না। এই জিনিসগুলা তো আমি জানি না। উনি (বড় ভাই) আইডিয়া করতেছে আর কী। ৬ দিনের একটা হিসেব করে উনি জিনিসটা এভাবে বলতেছে আর কী।’

আগের অভিজ্ঞতা থেকে দোকানপ্রতি ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা করে নেওয়া হয় জানিয়ে আবির বলেন, ‘তুমি হিসেব করো ৮ হাজার টাকা করে হলেও ৫০টা স্টল কত হতে পারে? তুমি ৮ হাজার টাকা করে ৫০টা মারো (হিসেব) কত?’ কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে অপরপ্রান্ত থেকে উত্তর আসে, ‘হুম, চার লাখ।’

আবির বলেন, ‘এর মধ্যে তোমার মাঠ একলাখ। তারপরে ডেকোরেশন দেড় লাখ। ইভেন্ট একলাখ। এবার বলো?’ রেজাউর বলেন, ‘আমি তো ওই হিসেবটা জানি না। ওনাকেও আমি ওই হিসেবটা বলি নাই। আমি জানলে তো বলতে পারবো।’

একপর্যায়ে রেজাউর জিজ্ঞেস করেন, ‘এমনিতে আপনি হচ্ছে যে কত পারবেন বিষয়টা? আপনি একটা বললে আমি ওনাকে (বড় ভাই) আইডিয়াটা দিতে পারবো আর কী।’

উত্তরে আবির বলেন, ‘এখন রেজা, তোমাকে তো খুলে বললাম, দেখো তুমি তোমার মতো করে।’ রেজাউর বলেন, ‘ভাইয়া আমার মনে হয় হচ্ছে যে, আপনি আমাকে আনুমানিক একটা অ্যামাউন্ট বললে আপনারটাই আমি ডেলিভার করতে পারি আর কি!’

আবির লাখখানেক টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলে রেজাউর তাকে বলেন, ‘আচ্ছা আমি এটা ডেলিভার করে দিচ্ছি’। আবির উত্তরে বলেন, ‘লাভেরটা সহ ইয়ে সহ… রেজা দেখ, শুধুমাত্র ওনার (উদ্যোক্তা পূর্ণিমা) একটা আত্মসম্মান এবং ফেয়ারটা করা। তুমি যদি আর বেশি কিছু না… একটা আত্মসম্মান নিয়ে দাঁড়াইছে।’

জবাবে সায় দিয়ে রিজাউর বলেন, ‘আমি বুঝতেছি তো ভাইয়া। এটা যদি বন্ধ হয় তাইলে এই নামটারও যে রেপুটেশন যেটা ছিল সেটায় বিশাল বড় আঘাত আসবে।’

কথোপকথনের একপর্যায়ে মেলার আয়োজক আফরোজা সুলতানা পূর্ণিমা পাশ থেকে রিজাউরকে বলেন, ‘আমার কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স নাই, ঠিকাছে? মেলা থেকে তুলে আমি মেলাতেই কাজ করি। এক মেলা থেকে আরেক মেলায় আমার কাছে টাকা থাকে না।’ এরপরই রিজাউর রাতের মধ্যে সেই বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানানোর আশ্বাস দেন।

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্ট-চেকবিষয়ক সম্পাদক কদরুদ্দীন শিশিরের কাছে অডিও রেকর্ডটি এআই জেনারেটেড কিনা জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, অডিওটি এআই জেনারেটেড—এমন কোনো প্রমাণ আমি পাইনি।

ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান ‘ফ্যাক্টওয়াচ’ এর ফ্যাক্টচেকার রিদওয়ান ইসলাম বলেন, অডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরির সম্ভাবনা কম। কৃত্রিম বুদ্ধিমতায় তৈরি অডিও এত নিখুঁত হয় না।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আসাদ বিন রনি দাবি করেছেন, আমাদের প্রাথমিক তদন্তে অডিও কল রেকর্ডটিকে সমন্বয়ক রিজাউরের ভয়েস বলে মনে হয়নি।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়ক রিজাউর রহমান একটি গণমাধ্যমকে বলেন, অডিও কলরেকর্ডে যার কথা শোনা যাচ্ছে সেটি আমি নই। তার ছবি ব্যবহার করে কল রেকর্ডের ভিডিও তৈরি করে এটি আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি এটা আওয়ামী লীগের পেজে দেখেছি। ভয়েস শুনে কি মনে হচ্ছে আমার? রেকর্ডের ভয়েস আমার না। আমার ছবি দেখার পরে আমি নিজেই চিন্তা করেছি ভয়েসটা কার।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় সিডিএ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে মেলাটির আয়োজনের উদ্যোগ নেন ‘চট্টগ্রাম অন্ট্রাপ্রেনর ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন। ২০ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেলাটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উদ্যোক্তা আফরোজা সুলতানা পূর্ণিমার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়ার পর মেলাটি বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।

এরপরই ওই নারী উদ্যোক্তা ধরনা দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চট্টগ্রামের অন্যতম শীর্ষ সমন্বয়ক রিজাউর রহমানের কাছে। এ সময় সবাইকে ‘ম্যানেজ’ করার বিনিময়ে রিজাউর তার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। তবে শেষ পর্যন্ত আরেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের বাধায় মেলাটি আর মাঠে গড়াতে পারেনি।

আরটিভি/এএএ/এআর


মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ
অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান আসলাম চৌধুরীর
সেপটিক ট্যাংকে পড়ে শিশুর মৃত্যু
জেলের জালে মর্টারশেল