চিংড়িসহ সামুদ্রিক পোনার জীবন ধারণের প্রথম খাবার জীবন্ত ফিড বা মাইক্রোএলজি উদ্ভাবনে সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর আওতাধীন কক্সবাজার সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র। নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে আহরণ ও সংরক্ষণ সম্ভব হওয়ার ফলে ভারত, থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয়ে পোনার ফিড আমদানির দরকার নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। হ্যাচারি শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ফিডের চেয়ে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ফিড গুণগত মান সমৃদ্ধ এবং ইতোমধ্যে কক্সবাজারের প্রায় অর্ধ শত হ্যাচারিতে তা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। যার কারণে হ্যাচারিগুলোর পোনা উৎপাদনের সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
চিংড়িসহ সামুদ্রিক মাছের পোনার জীবনের প্রথম খাবার লাইভ ফিড বা মাইক্রোএলজি। দেশের বিদ্যমান বাগদা চিংড়ির হ্যাচারিসমূহে ০-২০ দিন বয়সী চিংড়ির পোনা প্রতিপালনের জন্য প্রাথমিক ও সম্পূরক খাদ্য হিসেবে এ লাইভ ফিড বা এলজি ব্যবহার করে। পূর্বে এ এলজিসমূহ থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ভারত থেকে আমদানি করে ব্যবহার করতো। আমদানি জটিলতা ও ট্রান্সপোর্ট জটিলতার কারণে এলজির গুণগত মান কমে যেতো এবং দূষণ সংক্রমণ হতো। বিদেশি স্টক হওয়ার কারণে দেশে ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত গুণগত মান পাওয়া যায় না।
এ সমস্যা সমাধানে বিএফআরআই এর বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে কক্সবাজারের বঙ্গোপসাগর হতে চিংড়ির পোনা প্রতিপালনের প্রয়োজনীয় এলজি সমূহ বিশুদ্ধ স্টক পৃথক করে চাষ উপযোগী করে তুলেছে। বর্তমানে বিএফআরআই হতে কক্সবাজারের প্রায় সকল বাগদা হ্যাচারি এই বিশুদ্ধ এলজি স্টক (বীজ) সংগ্রহ করে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। যার দরুন পোনার বেঁচে থাকার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি গুণগত মানে পোনার উৎপাদন করা সহজতর হয়েছে।
কক্সবাজার সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বিএফআরআই এর উদ্ভাবিত বিএফআরআই পোর্টেবল ফটোবায়োরিএক্টর বিশুদ্ধ এলজি ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। স্বয়ংক্রিয় এই সিস্টেম ব্যবহারে যেকোনো হ্যাচারিগুলো খুব সহজেই বিশুদ্ধ এলজি স্টক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারবে।
হ্যাচারি পর্যায়ে এ ফটোবায়োরিএক্টর সিস্টেম সহযোজন হলে সারাবছর খুব সহজেই বিশুদ্ধ এলজি স্টক ব্যবস্থাপনা করা যাবে বলে আশাবাদী বলে জানান কক্সবাজার সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের অপর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তুরাবুর রহমান।
কক্সবাজার মডার্ন হ্যাচারি লি. এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মিশন দত্ত জানান, বঙ্গোপসাগর থেকে বাগদা চিংড়িসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মা মাছ এনে প্রজননের পর কক্সবাজার সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের মাধ্যমে বিনামূল্যে নিজস্ব প্রযুক্তির পোনার ফিড সংগ্রহ করতে পারায় লাভবান হচ্ছে হ্যাচারিগুলো। এর মধ্য দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে যে অর্থের অপচয় হয় তা রোধ করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই ফিড বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ফিডের চেয়ে গুণগত মান সমৃদ্ধ।
কক্সবাজার সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান ড. শফিকুর রহমান বলেন, এতদিন হ্যাচারিগুলো পোনার ফিড উৎপাদনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। তাই এই ফিড বিদেশ থেকে আমদানি করার কোন বিকল্প ছিলনা। তবে, গত তিন বছর ধরে নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে পোনার ফিড উৎপাদনে সফল হয়েছে কক্সবাজার সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারস্থ হ্যাচারিসমূহ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২০০ কোটি পোনা উৎপাদন করেছে। বিশুদ্ধ এলজি স্টক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে গুণগত মানের চিংড়ি পোনা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।
আরটিভি/এএএ-টি