হাতের সামান্য ব্যথা থেকে শুরু। ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে মরণব্যাধি ব্লাড ক্যানসার। জীবন থমকে যায় মাত্র ২১ বছর বয়সে। কথা হচ্ছে নওগাঁ জেলার পত্নীতলার নজিপুর পৌরসভার সরদারপাড়া এলাকার এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান মাহাবুব আলমকে নিয়ে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মাহাবুব। দরিদ্র বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল তাকে ঘিরে। কিন্তু হঠাৎ করেই সব কিছু ওলট-পালট হয়ে যায়। পরিবারের একমাত্র ছেলে মাহাবুবের ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ার পর নেমে আসে অন্ধকার।
বাবা নওশাদ আলী পেশায় একজন রঙ মিস্ত্রি। দিনমজুরির আয়েই চলে পরিবার। মা মর্জিনা বেগম গৃহিণী। থাকেন একটি টিনের ছাউনি ঘরে, ভাড়া বাসায়। সহায়-সম্পদ বলতে কিছুই নেই। এরই মধ্যে সন্তানের প্রাণ বাঁচাতে নিজের সর্বস্ব দিয়েও চেষ্টা থামাননি মা-বাবা।
প্রাথমিকভাবে পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয় মাহাবুবকে। এরপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যায় যে, তিনি ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের মুম্বাইয়ের বিখ্যাত টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে না পেরে ফিরিয়ে আনা হয় দেশে।
বর্তমানে মাহাবুব বগুড়ার টিএমএসএস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ‘নো-ক্যানসার ফোরাম’ নামের একটি সংগঠনের তত্ত্বাবধানে চলছে চিকিৎসা। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে প্রয়োজন অন্তত ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।
এত বড় অঙ্কের টাকা জোগাড় করা মাহাবুবের দিনমজুর বাবা-মায়ের পক্ষে অসম্ভব। তাই তারা দেশের সকল হৃদয়বান ও সামর্থ্যবান মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
মাহাবুবের মা বলেন, ছেলের যখন পেট ব্যথা শুরু হয়, তখন নিজের হাতে বেদানার রস বানিয়ে খাইয়েছিলাম। সেই থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসকরা পরে জানান ওর ব্লাড ক্যানসার হয়েছে।
অসুস্থ মাহাবুব বর্তমানে সারাদিন বিছানাতেই কাটান। তবে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ ও ভবিষ্যৎ স্বপ্ন এখনও বেঁচে আছে তার চোখে মুখে। সুস্থ হয়ে আবারও কলেজে ফিরতে চান তিনি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করছেন। তবে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ এখনও অনেক দূরের পথ। তাই সমাজের বিত্তবানদের কাছে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এদিকে পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলীমুজ্জামান মিলন বলেন, সরকার পাঁচটি বড় রোগে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে। ক্যানসার তার মধ্যে একটি। মাহাবুবের পরিবার সমাজসেবার অধীনে দরখাস্ত করেছেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারি সহায়তার পাশাপাশি সমাজের বাকি অংশকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই মাহাবুবের মতো সম্ভাবনাময় একজন শিক্ষার্থীকে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে যাওয়া এই তরুণ শিক্ষার্থী এখন সমাজের সহযোগিতার আশায় প্রহর গুনছেন। একটু সহানুভূতি আর ভালোবাসায় হয়তো আবারও নতুন করে বাঁচতে পারেন মাহাবুব, ফিরতে পারেন তার স্বপ্নের শিক্ষাঙ্গনে।
আরটিভি/এমএ/এআর