কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে এখন ‘হলুদ সোনা’ ভুট্টা মাড়াইয়ের শেষ সময়। গত কয়েক বছর ধরে হাওরে ভুট্টা আবাদে ঝুঁকছে কৃষকরা। ধানের পাশাপাশি ভুট্টা বা ‘হলুদ সোনা’ উৎপাদনে খরচ কম, লাভ বেশি, নেই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির ভয়। ফলে দিনদিন বাড়ছে ভুট্টার চাষ।
সরেজমিন হাওর ঘুরে দেখা যায়, কেউ জমি থেকে ভুট্টা সংগ্রহ করে নিয়ে আসছে বাড়ির আঙ্গিনায়। কেউবা ভুট্টা মাড়াই শেষে উঠুনে শুকিয়ে সংরক্ষণ করছেন ঘরে। দুর থেকে মনে হবে উঠুন বা খলায় ভরে উঠেছে হলুদ সোনার গালিচা। কৃষক পরিবারের সকল সদস্যরা মিলে ব্যস্ত সময় পার করছে স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে।
এক ফসলী হাওরের কৃষক ও মৎস্যজীবীরা হেমন্তে ধান চাষ ও বর্ষায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা চিরায়ত প্রথা। সাম্প্রতিক জলবায়ুর ও সেচ সংকটের প্রভাবে, পতিত ও অনুর্বর জমিতে কম খরচে অধিক লাভের আশায় শুরু হয় ভুট্টা চাষ।
চলতি মৌসুমে অনুকূল পরিবেশ থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে উৎপাদন খরচ ও উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে খরচ বেশি হয়েছে। কিন্তু, বাজারে ভুট্টার কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় হতাশ কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিন উপজেলায় ৪ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে, ৫০ হাজার ৪৯০ থেকে ৫২ হাজার ৭৮৫ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদিত হয়েছে। এবার প্রতি মণ ভুট্টা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা প্রায় উৎপাদন খরচের সমান। গত মৌসুমে ১২০০ থেকে সাড়ে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল।
কৃষকদের দাবি, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চক্র কৌশল করে ভুট্টার দাম কমিয়ে কৃষকদের ক্ষতি করছে। কৃষকদের ধার-দেনা পরিশোধে কমদামে ভুট্টা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারিভাবে ধান-চাউল ক্রয়ের মতো ভুট্টা ক্রয়ের আবেদন করেন তারা।
কিশোরগঞ্জ হাওরাঞ্চল অষ্টগ্রামে ৯৮০ হেক্টর। ইটনায় ৭২৫ হেক্টর ও মিঠামইনে ২ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১১ থেকে সাড়ে ১১ মেট্রিক টন।
অষ্টগ্রাম উপজেলার কলমা ইউনিয়নের কৃষক হরিমোহন দাস (৩৯) বলেন, বেশি লাভের জন্য ভুট্টা চাষ করি, কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে লাভ হয় না। আমাদের কাছে মাল (ভুট্টা) থাকেলে দাম থাকে না। ব্যবসায়ীরা কম দামে কিনে স্টক করে, পরে বেশি দামে বেঁচে বেশি লাভ করে। আমরা কিছুই পাইনা।
মিঠামইন উপজেলার সদর ইউনিয়নের মহিষারকান্দির কৃষক তারিকুল ইসলাম বলেন, সবাই কৃষকের দোহাই দেয়, আসলে কৃষকের চিন্তা কেউ করে না। আমরা এতো কষ্ট করে চাষ করি কিন্তু, উচিত দাম পাই না। আমরা চাই সরকার সরাসরি আমাদের ভুট্টা কিনুক।
মিঠামইন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, মো. ওবায়দুল ইসলাম খান অপু বলেন, ইতিমধ্যে প্রায় শতভাগ ভুট্টা মাড়াই শেষ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। আমাদের আশার চেয়েও বেশি ফলনে খুশি কৃষকরা। তবে ভুট্টার দাম নিয়ে হতাশ কৃষকরা।
আরটিভি/এএএ