ঢাকাSunday, 13 July 2025, 29 Ashaŗh 1432

হিলিতে আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযানে বিজিবির বাধা দেওয়ার অভিযোগ

হিলি প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ 

মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫ , ০৮:৪৪ পিএম


loading/img
ছবি: আরটিভি

দিনাজপুরের হিলিতে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজিবির বিরুদ্ধে। এ সময় আসামি ইমন হোসেন (২৭) পালিয়ে গেলেও তার বাড়ি থেকে আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি মাদক মামলা করা হয়েছে। 

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যায় উপজেলার হিলি বিওপি ক্যাম্পের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

উপজেলার দক্ষিণ বাসুদেবপুরের চুড়িপট্টি গ্রামের স্থানীয়রা জানান, হাকিমপুর থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য বিজিবির হিলি বিওপি ক্যাম্পের গেটের সামনে ইমন হোসেনের বাড়িতে যায়। তারা ইমনের খোঁজে অভিযান শুরু করলে ক্যাম্পের বিজিবি গোয়েন্দা সদস্য রুকু মিয়া থানার এস আই মোস্তাফিজুর রহমানকে উচ্চস্বরে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলে। এস আই মোস্তাফিজুর সহ অন্যান্য ফোর্স বাড়ি থেকে বের হয়ে ওই বিজিবি গোয়েন্দা সদস্যের পরিচয় জানতে চায়। তখন সে আরও উত্তেজিত হয়ে পুলিশদের সামনে গিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। 

বিজ্ঞাপন

এ সময় বিজিবির গোয়েন্দা সদস্যের সঙ্গে ৩-৪ জন বিজিবি সদস্য ছিল। একপর্যায়ে এস আই মোস্তাফিজুর ওসিকে ফোন দিলে কিছুক্ষণ পর ওসি আসে। কিন্তু তার আগেই ইমন বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।

জানা গেছে, ইমন হোসেন হিলি বিওপি ক্যাম্পের গেটের ৩০-৩৫ গজ পশ্চিমে মৃত আব্দুস ছালামের ছেলে। সে এলাকায় মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত। তার নামে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।

থানার এস আই মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ইমনের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে নিয়ম মেনে তাকে গ্রেপ্তার করতে চুড়িপট্টিস্থ হিলি বিওপি ক্যাম্প এলাকায় অভিযানে যায়। এছাড়া খবর ছিল সে ভারত থেকে মাদক পাচার করে এনে নিজ বাড়িতে কেনা-বেচা করছে। এ সময় বাড়ির লোকজনকে তার ব্যাপারে জানতে চাওয়া মাত্র সিভিলে একব্যক্তি এসে উত্তেজিত হয়ে আমাকে বলে এই বাড়ি থেকে বের হও। তোমরা কারা। তোমাদের পরিচয় কি এমন নানা আজে-বাজে কথা বলতে থাকে। আমি বলি আমরা থানার পুলিশ, আমি এস আই মোস্তাফিজুর। পাশের উনি থানার সেকেন্ড অফিসার। আমি বলি আপনার পরিচয় কি? সে তখন পরিচয় না দিয়ে রাগান্বিত হয়ে কথা বলতেই থাকে। আমি উপায়ন্তর না পেয়ে ওসি স্যারকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বলি। এরপর জানতে পারি ওই ব্যক্তি বিজিবির গোয়েন্দা সদস্য। তার নাম রুকু মিয়া বলে জানতে পারি। কিছুক্ষণ পর ওসি স্যার আসলে সে ক্যাম্পের ভিতরে ঢুকে পড়ে। 

বিজ্ঞাপন

এস আই মোস্তাফিজ আরও জানান, সাংবাদিক ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতে ইমনকে গ্রেপ্তারে তার বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। এ সময় তার বাড়ি থেকে আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় ৪৯০ পিস নেশাজাতীয় ইনজেকশন (এ্যাম্পল) ও ৭ বোতল অফিসার চয়েস মদ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে সেখানে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে উদ্ধার করা ভারতীয় মাদকদ্রব্যের সিজারলিষ্ট তৈরি করে থানায় জমা রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

image

থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নাজমুল হক জানান, দুটি মাদক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি মাদক ব্যবসায়ী ইমনের বাড়িতে মাদক কেনা-বেচার খবর পেয়ে এবং ইমনের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে থানার দুইজন অফিসার সহ সঙ্গীয় ফোর্স তাকে গ্রেপ্তার করতে যায়। এ সময় ইমনের বাড়ীতে প্রবেশের পরপরই বিজিবির একজন গোয়েন্দা সদস্যের বাধা দেওয়ার কারণে ইমনকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। বিজিবির গোয়েন্দা সদস্য রাষ্ট্রীয় কাজে পুলিশকে সহযোগিতা না করে সেখানে বাধা দেওয়া হয়েছে। তার বাধার মুখে পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ইমনের নামে আরও ৪টি মাদক মামলা সহ তার মায়ের নামও ২টি মামলা রয়েছে।

ওসি আরও জানান, এ ব্যাপারে আমি বিজিবির হিলি বিওপি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার ও ওই বিজিবি গোয়েন্দা সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছি। কিন্তু তারা কেউ কথা বলতে চাননি। পরে জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের (সিও) সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। কেন বাধা দেওয়া হলো বা মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিজিবির ওই গোয়েন্দা সদস্যের কি সম্পর্ক রয়েছে বিষয়টি তাকে জানানো হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও দন্ত কতরে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনা আমাদের কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ইমনের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া মাদকদ্রব্যগুলি থানায় রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) লে. কর্ণেল মো. আরিফুল দৌলা সাংবাদিকদের জানান, মাদক উদ্ধারে পুলিশকে বাধা দেওয়া হয়নি। বিজিবির সদস্যরা পুলিশকে সহযোগিতা করেছে। সীমান্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করতে হলে কিছু নিয়ম আছে, তা মেনে পুলিশ অভিযান করতে পারে। পরে থানার অফিসার ইনচার্জ আমাকে ফোন করলে আমি অভিযানের অনুমতি দিয়েছি। বাধা দেওয়ার কারণে পুলিশ আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি এমন প্রশ্নের উত্তরে সিও বলেন, এমন কোন ঘটনা সেখানে ঘটেনি।

এদিকে এ ঘটনায় থানার এস আই সুমন কুমার সরকার বাদী হয়ে ইমন ও তার মা লিলি বেগমকে আসামি করে সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় থানায় মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং ০৩।

আরটিভি/এএএ 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |