রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশি যুবক নিহত, দালালের বিচার দাবি

নরসিংদী প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫ , ০৪:৪৪ পিএম


রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পলাশের যুবক নিহত, মরদেহ ফেরত ও দলালের বিচার দাবি

ইচ্ছে ছিল প্রবাসে গিয়ে নিজের ভাগ্য বদল করবেন কিন্তু সেই আশা আর পূরণ হলো না সোহান মিয়ার। দালালের খপ্পরে পড়ে রাশিয়া গিয়ে রুশ বাহিনীর হয়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে অংশ নিয়ে অবশেষে প্রাণ গেল নরসিংদীর পলাশ উপজেলার এই যুবকের। 

বিজ্ঞাপন

সোহান মিয়া উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের মৃত সোহরাব মিয়ার ছেলে। পরিবারে তার মা নূরুন্নাহার ও স্ত্রী হাবিবা আক্তার এবং তার ১৬ মাসের ছেলে ফারহান রয়েছে।

আরও পড়ুন

শনিবার (২১ জুন) বিকাল সাড়ে তিনটায় সোহানের বন্ধু সহযোদ্ধা জাফরের ফোনের মাধ্যমে সোহানের মায়ের ফোনে খবর আসে সোহান যুদ্ধে মারা গেছে। পরে ফোনে সোহানের মরদেহের ছবিও পাঠায় জাফর। মৃত্যুর খবরে সোহানের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। রোববার বাদ জোহর গ্রামের বাড়ির পাশের মসজিদে তার গায়েবানা জানাজা পড়েন এলাকাবাসী।

সোহানের বাড়ি ও তার এলাকায় দেখা দেয় শোকের মাতম। চাকরির আশায় বিদেশ পাড়ি জমিয়েছিলেন সোহান মিয়া ও তার বোনের জামাই আকরাম মিয়া। ইচ্ছা ছিল ইউরোপে গিয়ে নিজেদের ভাগ্য বদল করবেন। সেজন্য ধারদেনা করে ১৪ লাখ টাকার বিনিময়ে দেশ ছাড়েন তারা। কিন্তু বিধিবাম। দালালচক্র তাদের রাশিয়া নিয়ে গেলেও তাদের কথামতো চকলেট কারখানায় কাজ না দিয়ে রাশিয়ার কাছে বিক্রি করে দেয়। ফলে সে দেশে গিয়ে সোহানকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে যাওয়ার জন্য অস্ত্রের প্রশিক্ষণে নামতে হয়েছে। তবে তার বোনজামাই আকরাম মিয়া কৌশলে পালিয়ে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। আকরাম সরকারচর গ্রামের কাজল মিয়ার ছেলে।

বিজ্ঞাপন

সোহানের বড় চাচা রেজাউল আলম রিপন বলেন, ঢাকার বনানীর ড্রিম হোম ট্রাভেলস থেকে জেরিন নামে এক দালালের মাধ্যমে সাইপ্রাস যাওয়ার জন্য কাগজপত্র জমা দেন তারা। কিন্তু দীর্ঘদিন পর দালাল চক্র রাশিয়ার ভিসা করে দেন তাদের। পরে ২০২৫ সালের ২২ ডিসেম্বর ১০ জনের একটি দল রাশিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়।

বিজ্ঞাপন

‘রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সেখানে তাদের ৪ দিন রাখে। কিন্তু সোহানসহ আরও দু’জনকে একদিন পরই সেখান থেকে নিয়ে যায় রাশিয়ার সেনা ক্যাম্পে। নিয়েই শুরু হয় দালাল চক্রের অত্যাচার। যুদ্ধের প্রশিক্ষণে যেতে সামরিক পোশাক দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ নিতে না চাইলে দেওয়া হয় হত্যার হুমকি। করা হয় মারধর, দেওয়া হয় না খাবার। পরে সোহান আকরামকে এগুলো জানায় এবং সেখান থেকে পালিয়ে যেতে বলে। সোহানের দু’দিন পরে আকরামেরও যাওয়ার কথা ছিল। পরে সেখান থেকে আকরাম পালিয়ে গিয়ে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করে দেড় লাখ টাকা নিয়ে টিকিট কেটে গত ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ফিরে আসে।’

সোহানের মা নূরুন্নাহারের কান্নায় আকাশ বাতাস বাড়ি হয়ে উঠছে। কতক্ষণ পর পরই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি জানান, ধারদেনা করে ৭ লাখ টাকা দিয়ে তার একমাত্র ছেলেকে বিদেশে পাঠানো হয়। দালাল চক্র সোহানকে রাশিয়ায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধে নামিয়ে ছিল তার সন্তানকে। সংসারের একমাত্র উপার্জনশীল সোহান। 

তিনি আরো বলেন, ‘এখন আমি কি করবো। যুদ্ধ চলাকালে মাঝে মধ্যে তার সাথে কথা হতো, সে সারাক্ষণ কান্না করতো দেশে আসার জন্য। তার বন্ধু জাফর আমাকে জানায়, সোহানের শরীরে বোমা বিস্ফোরণ হলে সে মারা যায়। আমি দালালদের গ্রেপ্তারসহ বিচার চাই। আর যেন তাদের খপ্পরে পড়ে কোন মায়ের বুক খালি না হয়। সরকারের কাছে তার ছেলের মরদেহ ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন তিনি।

সোহানের স্ত্রী হাবিবা আক্তার জানান, আমার স্বামীকে ফিরিয়ে আনতে ড্রিম হোম ট্রাভেলসে যোগাযোগ করা হয়েছে অনেকবার। পুনরায় আড়াই লাখ টাকা দিয়ে বলেছিল জানুয়ারি ২৬ তারিখ সোহানকে এনে দিবে। কিন্তু তার বদলে সে এখন লাশ হয়ে বিদেশের মাটিতে পড়ে রয়েছে।

হাবিবা আক্তার বিলাপ করে কান্না করে আরো বলেন, আমরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়েও যোগাযোগ করেছি তারাও কিছুই করলো না। এখন আমার ১৬ মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে কিভাবে বাঁচবো। আমি দালালদের বিচার ও শাস্তি চাই। সরকারের কাছে দাবি জানাই আমার স্বামীর লাশ যেন দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে।

এ বিষয়ে পলাশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করলে আমরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সোহানের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো। তার পরিবারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission