চা উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ৫ দেশ, বাংলাদেশের অবস্থান কততম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪ , ০৭:০২ পিএম


চা উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ৫ দেশ, বাংলাদেশের অবস্থান কততম
চা উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বে ভিয়েতনাম পঞ্চম।

দিনে একবার চায়ের দোকানে বসে চা না খেলে অনেকেরই গোটা দিনটাই যেন অপূর্ণ থেকে যায়। তবে চা কিন্তু শুধু পানীয় হিসেবেই ব্যবহৃত হয় না। অনেকসময় দেশে দেশে বন্ধুত্ব তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। যেমন, ১৯৭৩ সালে আরব ইসরায়েল যুদ্ধের সময় আরবদের প্রতি সমর্থন এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মিশরে চা পাঠিয়েছিলেন সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষের কাছে চা পান কেবলই একটি অভ্যাস হলেও, এর বেশ কিছু স্বাস্থ্যগুণও রয়েছে। যুগে যুগে চায়ের আবেদনও বেড়েই চলেছে।

যদিও বিশ্বের মাত্র গুটিকয়েক দেশ এই ক্রমবর্ধমান চায়ের চাহিদা মেটাতে পারে।

বিজ্ঞাপন

চীন

খ্রিষ্টের জন্মের দেড় হাজার বছর আগে চীনের ইউনান প্রদেশে একটি ঔষধি পানীয় হিসাবে চা পানের প্রচলন শুরু হয়েছিলো। তাই সারাবিশ্বে এই স্থানটি চায়ের জন্মস্থান নামে পরিচিত।

চা মূলত তৈরি করা হয় ক্যামেলিয়া সিনেসিস নামের চিরহরিৎ গুল্ম থেকে। এই ছোট গাছের পাতা এবং পাতার কুঁড়ি সংগ্রহ করে এর থেকে চা উৎপাদন করা হয়। ব্ল্যাক টি (র' চা), গ্রিন টি (সবুজ চা), হোয়াইট টি (সাদা চা), এমনকি উলং টি’র মতো হাজার প্রকারের চা আছে বিশ্বে। কিন্তু সেগুলোর সবই তৈরি করা হয় ওই গাছের পাতা থেকে।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দেশ চীনের বার্ষিক চা উৎপাদন গড়ে ৩১ লাখ মেট্রিক টনের বেশি, যার বাজারমূল্য ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।

মূলত, কয়েক শতাব্দী ধরেই চা চীনের জাতীয় পানীয় হিসাবে বিবেচিত হয়েছে এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং এমনকি ধর্মীয় কারণে সমগ্র চীনে এটি তুমুল জনপ্রিয়। তাই, নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ২০২৩ সালে চীন প্রায় দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের চা রপ্তানি করেছে।

ভারত

ভারতবর্ষে আগে চায়ের ব্যবহার তেমন একটা ছিল না। কিন্তু ব্রিটিশরা ১৮০০ দশকের গোড়ার দিকে ভারতে চা ব্যবহার ও উৎপাদন করা শুরু করে।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন ভারতে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ করা শুরু করে, তখন এই চা ছিল সমাজের উঁচু শ্রেণির লোকদের পানীয়। পরবর্তীতে তা ধীরে ধীরে সর্বসাধারণের মাঝেও জনপ্রিয় হয়।

স্ট্যাটিস্টা বলছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী চায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার ভারত। দেশটিতে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ মেট্রিক টনের বেশি চা উৎপাদিত হয়।

ভারতের আসাম, তামিলনাড়ু হলো সর্বাধিক চা উৎপাদনকারী অঞ্চল, যার বেশিরভাগই নীলগিরি জেলার পাহাড়ে জন্মে। অন্যান্য চা-উৎপাদনকারী দক্ষিণের মুন্নার এবং ওয়ানাদ।

কেনিয়া

স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী, চা উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের দেশ কেনিয়ার নাম। কেনিয়াতে বছরে সাধারণত পাঁচ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি পরিমাণ চা উৎপাদন হয়।

যদিও ২০২৩ সালে দেশটিতে তার আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম চা উৎপাদিত হয়েছে। ওই বছর দেশটিতে মোট উৎপাদিত চায়ের পরিমাণ ছিল চার লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন।

রৌদ্রোজ্জ্বল জলবায়ু ও গাঢ় লাল মাটির কারণে চা উৎপাদনের জন্য কেনিয়া এক স্বর্গভূমি। আফ্রিকান দেশগুলোর মাঝে সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদনকারী দেশ এটিই।

তবে কেনিয়ায় যত পরিমাণ চা উৎপাদিত হয়, তার বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা হয়। বলা হয়ে থাকে, চা-ই হলো কেনিয়ার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।

২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কেনিয়া থেকে ৪৫টিরও বেশি দেশে চা রপ্তানি করা হয়েছিলো। তবে রপ্তানিকৃত চায়ের ৪০ শতাংশ কিনেছিলো পাকিস্তান। মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রও প্রচুর চা কিনেছিলো।

শ্রীলঙ্কা

বিশ্বের শীর্ষ চা রপ্তানিকারী দেশের মাঝে শ্রীলঙ্কার নামও আছে। শ্রীলঙ্কার সিলন চা পৃথিবীব্যাপী বিখ্যাত।

স্ট্যাটিসটা ও টি এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন শ্রীলঙ্কা অনুযায়ী, দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালে আড়াই লাখের বেশি মেট্রিক টন চা উৎপাদিত হয়েছিলো।

চলতি বছরের শুরুর তিন মাসেই সেখানে ৫৮ হাজার মেট্রিক টন চা উৎপাদন করা হয়ে গেছে।

শ্রীলঙ্কার ওই ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কায় যে পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছিলো, তার প্রায় দুই লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টন চা রপ্তানি করা হয়েছে।

শ্রীলঙ্কা থেকে যারা চা আমদানি করে, তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো তুরস্ক, ইরাক, রাশিয়া ইত্যাদি দেশ।

ভিয়েতনাম

চা উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মাঝে এশিয়ার এই দেশটিও আছে। ভিয়েতনামের ব্ল্যাক ও গ্রিন টি'র খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। তবে ভিয়েতনামের সবুজ চা'র কদর উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

এই দেশটি লোটাস (পদ্ম) ও জেসমিন (জুঁই) চায়ের জন্যও বিখ্যাত। পদ্মের পাতা, ফুল, শিকড়, ফল, বীজ বা ভ্রূণ থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় লোটাস চা তৈরি করা হয়। আর জেসমিন চা মূলত প্রস্ফুটিত জুঁই ফুল থেকে চায়ের সাথে সৌরভ মিশ্রিত করে একধরনের সুগন্ধি চা। জেসমিন চায়ের স্বাদ মিষ্টি এবং সুগন্ধিযুক্ত হয়ে থাকে।

স্ট্যাটিসটা অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশটিতে এক লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টন চা উৎপাদিত হয়, তার আগের বছরের তুলনায় চা এক লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি। ওই বছর দেশটির ১২৩ হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ করা হয়েছিলো।

বাংলাদেশের অবস্থান কততম?

চা উৎপাদনকারী শীর্ষ পাঁচটি নয় কেবল, ১০টি দেশের তালিকায়ও বাংলাদেশ নেই। ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসের তথ্য অনুযায়ী, চা উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ ১২তম।

বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকা দেশগুলো হলো তুরস্ক, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, আর্জেন্টিনা, জাপান ও থাইল্যান্ড।

বাংলাদেশ চা বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চা উৎপাদনের অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করে ২০২৩ সালে মোট ১০২ দশমিক ৯২ মিলিয়ন কেজি (১ লক্ষ টনের কিছু বেশি) চা উৎপাদিত হয়েছে।

উৎপাদিত চা থেকে এক মিলিয়ন কেজির কিছুটা বেশি পরিমাণ চা রপ্তানি করা হয়েছে। রপ্তানিকৃত চায়ের মূল্য ২৭২ মিলিয়ন টাকার চেয়ে সামান্য বেশি।

এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে ২০০১ সালের সাথে তুলনা করলে গত দুই দশকেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে দেশটিতে চায়ের উৎপাদন বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু চা রপ্তানির পরিমাণ অনেকাংশেই কমেছে।

অর্থাৎ, এই সময়ের মাঝে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই চায়ের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

জানা যায়, ১৯৭০ সালে বাংলাদেশে চা বাগানের সংখ্যা ছিল ১৫০টি, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১৬৮টি।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission