উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। ৫ দশকের বেশি সময় ধরে ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান করেছেন এই গুণী তারকা শিল্পী। সারা বিশ্বেই কুড়িয়েছেন কোটি মানুষের ভালোবাসা। অসংখ্য গানের মাধ্যমে শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। তবে এখনও গান গাওয়ার চেয়ে বেশি সময় দিচ্ছেন নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে।
এর ধারাবাহিকতায় এবার বৃদ্ধাশ্রমের বদ্ধ চার দেয়ালের মাঝে প্রিয় সন্তানের জন্য মুখ লুকিয়ে নিরবে যারা ফেলছেন চোখের অশ্রু। তাদের অতীতের সুখ গল্পগুলো আঁকড়ে ধরে বুকে পাথর চেপে জীবনযাপন করছেন যেসব অসহায় বাবা-মা। যাদের জীবনের সমস্ত সুখ-দুঃখকে বিসর্জন দিয়ে এসেছেন সন্তানের জন্য। সেসব মায়েদের সঙ্গে এবার দেখা করলেন কিংবদন্তি এই শিল্পী।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীর উত্তরার ‘আপন ভুবন’ বৃদ্ধ মায়েদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটান তিনি। কিংবদন্তি এই শিল্পীকে পেয়ে ভীষণ খুশি হন আশ্রমের বৃদ্ধারা। মন খুলে গল্প করেন ও তাদের গান শোনান রুনা লায়লা।
এ প্রসঙ্গে রুনা লায়লা গণমাধ্যমে বলেন, ‘আশ্রমের মায়েদের মাঝে নিজের প্রয়াত মাকে খোঁজার চেষ্টা করছিলেন তিনি। আগেও বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে রুনার। তবে এবার তিনি বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। মায়েদের অনুরোধে রুনা লায়লা গান গেয়েও শোনান তাদের।’
ইতোমধ্যেই রুনা লায়লার এমন কাণ্ডে নেটমাধ্যমে প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার পর থেকেই এটি ঘটেছে। তবে তিনি প্রশ্ন রেখেছেন সেসব সন্তানদের প্রতি যারা তাদের বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দিব্যি সুখে-শান্তিতে জীবন পার করছেন। এ কেমন সন্তান তারা।
প্রসঙ্গত, রুনা লায়লার যখন আড়াই বছর বয়স তার বাবা রাজশাহী থেকে বদলি হয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতানে যান। সে সূত্রে তার শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরে।
১৯৭৪ সালের শুরুতে প্রয়াত সত্য সাহার সুরে ‘জীবন সাথী’ ছবিতে গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন তিনি। গানের কথা ছিল ‘ও জীবন সাথী তুমি আমার’। এ গানে তার সঙ্গে কণ্ঠ দেন খন্দকার ফারুক আহমেদ। তবে পাকিস্তানের ‘যুগ্নু’ ছবিতে ছোটবেলায় রুনা লায়লা প্রথম প্লেব্যাক করেন। এরপর পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অসংখ্য ছবিতে তিনি প্লেব্যাক করেছেন।
সংগীতে আকাশছোঁয়া সাফল্য অর্জন করা শিল্পী রুনা লায়লা নাচেও বেশ পারদর্শী। ৪ বছর বুলবুল একাডেমি করাচিতে ভরতনাট্যম, কত্থক, কত্থকলি শিখেছিলেন এ তারকা। নন্দিত এই শিল্পী অভিনয় করেছেন ‘শিল্পী’ নামক চলচ্চিত্রেও। পেয়েছেন নানা পুরস্কার।
এসবের মধ্যে রয়েছে দেশ থেকে বেশ কয়েকবার জাতীয় চলিচ্চত্র পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার। এ ছাড়া ভারত থেকে পেয়েছেন সায়গল পুরস্কার। পাকিস্তান থেকে অর্জন করেছেন নিগার, ক্রিটিক্স, গ্র্যাজুয়েটস পুরস্কারসহ জাতীয় সংগীত পরিষদ স্বর্ণপদক।