দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ‘জলের গান’র শিল্পী ও সংগীত পরিচালক রাহুল আনন্দ। সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার ধানমন্ডির বাসায় নিজস্ব স্টুডিওতে সময় কাটিয়েছেন। এ নিয়ে কিছু প্রশ্নও উঁকি দিচ্ছে অনেকের মনে।
তারা জানতে চাইছে, কেন রাহুল আনন্দের বাড়িতেই পা রাখলেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ? দেশে তো আরও বহু শিল্পী আছেন, রাহুলের চেয়ে বয়সে, সাফল্যে, জনপ্রিয়তায় এগিয়ে। তবু কেন তার বাড়িতেই গেলেন ফরাসি রাষ্ট্রপতি?
রাহুল আনন্দ তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে লিখেছেন, আমি বাংলায় গান গাই... বাংলাকে ও এই দেশের মানুষকে ভালোবাসি। ক’দিন আগে ফ্রান্সের মহামান্য প্রেসিডেন্ট আমার স্টুডিওতে এসেছিলেন। তাতে আপনারা অনেকেই আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাদেরকে ধন্যবাদ ও ভালোবাসা ।
অতঃপর তার বাড়িতে ম্যাক্রোঁর আগমনের কারণ জানালেন। রাহুল আনন্দের ভাষ্য, অনেকের নানান প্রশ্ন, কেন তিনি আমার এখানে এলেন, উদ্দেশ্য কী ছিল, বাংলাদেশে কি আর কোন সংগীতশিল্পী ছিল না? আমি এর উত্তর বারবার নানা মাধ্যমে দিয়েছি, আবারও দিচ্ছি।
প্রথমত, সাংস্কৃতিক আয়োজন ছিল আলিয়ঁন্স ফ্রঁসেজের (ঢাকায় নিযুক্ত ফরাসী সংস্থা)। তারা চেয়েছেন তাদের রাষ্ট্রপতিকে বিভিন্ন মাধ্যমের কিছু শিল্পীর সঙ্গে কথা বলাতে এবং বাংলাদেশের পারিবারিক আবহ দেখাতে। এই আয়োজনে আমি ছাড়া অন্য শিল্পীরাও ছিলেন- কামরুজ্জামান স্বাধীন ও মৌসুম, আফরোজা হোসাইন সারা, আশফিকা রহমান।
রাহুল সেখানে আরও বলেন, আমরা সকলেই আঁলিয়াস ফ্রঁন্সেজের সঙ্গে আগে নানা আর্ট ও মিউজিক প্রজেক্টে কাজ করেছি। আমার ধারণা সেই কারণেই আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
রাহুল মনে করেন, অন্য যেকোনো স্থানেই এই সাক্ষাৎ হতে পারত। কিন্তু তিনি চেয়েছেন আমার স্টুডিও দেখতে, বাদ্যযন্ত্র দেখতে। ঘটনাক্রমে, আমার স্টুডিও এবং যন্ত্র তৈরির কারখানা আমার বাড়িতেই। আমি যে বাড়িতে থাকি, তা শত বছরের পুরানো স্থাপত্য, যার কারণে ইতিহাসের একটা চিহ্ন আছে। হয়ত সে-ও এক আকর্ষণীয় ব্যাপার ছিল। উল্লেখ্য, পুরোটা সময় ওনার সঙ্গে ছিলেন আমাদের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মহোদয়। আমরা তাকেও একই সম্মানে বরণ করি। রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে আমি এ দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। আমার ধারণা আপনারা যে কেউই তাই করতেন।
ম্যাক্রোঁকে নিজের বাড়িতে দেখে অবাক এবং আপ্লুত রাহুল জানান, এত বড় মাপের একজন রাষ্ট্রীয় অতিথি হঠাৎ আমার দরজায়! স্বাভাবিক ভাবেই, আমি অবাক হই, অভিভূত হই। সত্যি বলতে পুরোটা সময় আমি বিস্ময়ের এক ঘোরে ছিলাম! এদিকে সময় খুব সীমিত, তাই মনোনিবেশ করতে হয়েছে আতিথেয়তায়।
আমি আমার দেশের নাগরিক তথা সরকার ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাকে যথাযোগ্য সম্মান ও আমাদের সংস্কৃতি অনুযায়ী বরণ করতে চেষ্টা করেছি। অতিথিসেবা আমাদের পূর্বপুরুষের সংস্কৃতির প্রধান অঙ্গ এবং দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। সেই জন্যেই করেছি।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে বন্ধু-সহশিল্পীদের সঙ্গে গঠন করেন ‘জলের গান’ ব্যান্ড। এই দলের হয়ে তিনি বেশ কিছু নন্দিত গান উপহার দিয়েছেন। এ ছাড়া দেশীয় সুরের বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আলাদা পরিচয় তৈরি করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, রাহুল নিজেও বেশ কয়েকটি বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেছেন।