রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সনদ ৫ বছরের জন্য স্থগিত করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। আগামী ৫ বছর চিকিৎসা পেশায় যুক্ত থাকতে পারবেন না তিনি।
রোববার (২২ জুন) বিএমডিসির শৃঙ্খলা কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ইসমাইল পাটোয়ারী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ৫ বছরের জন্য তার নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ৫ বছর তিনি কোনো রোগী দেখতে পারবেন না। এ ছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগে আরও ১২ চিকিৎসকের বিএমডিসি সনদ ৬ মাস থেকে ৪ বছর পর্যন্ত স্থগিত করেছে বিএমডিসি।
ডা. ইসমাইল পাটোয়ারী বলেন, শনিবার (২১ জুন) বিএমডিসির সাধারণ সভায় বিভিন্ন সময়ে আসা অভিযোগেরগু পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএমডিসি।
রোগীর স্বজনরা জানান, রাহিব রেজাকে ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় খালি পেটে ল্যাবএইড হাসপাতালে আসতে বলা হয়। যথাসময়ে তিনি হাসপাতালে এলেও এন্ডোস্কপি শুরু হয় রাত ১১টার দিকে। এর দেড় ঘণ্টা পরও রোগীকে বাইরে না আনা হলে একজন জোর করে এন্ডোস্কোপি রুমে ঢুকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান। এরপর অবস্থা জটিল হলে রাহিব রেজাকে ল্যাবএইড হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। সবশেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তদন্ত কমিটির রিপোর্টে রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে রাহিব রেজার (৩১) মৃত্যুর ঘটনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ও তার টিমের বিরুদ্ধে গুরুতর চিকিৎসা অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়। একইসঙ্গে ল্যাবএইড হাসপাতালের এন্ডোস্কোপি ব্যবস্থাপনার ত্রুটি পাওয়া গেছে বলে জানায় কমিটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাহিব রেজার শারীরিক প্রাক-পরীক্ষা মূল্যায়নের জন্য ডাক্তার স্বপ্নীল ও তার চিকিৎসক টিমের প্রয়োজনীয় পেশাগত দায়িত্ব ও উপযুক্ত দক্ষতার ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। এন্ডোস্কোপি টিমের দেওয়ার তথ্য অনুযায়ী তার চিকিৎসা প্রক্রিয়া স্বাভাবিক ছিল না। এন্ডোস্কোপি রুমে প্রবেশ এবং অসুস্থতার পর আইসিইউতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া ছিল দীর্ঘ। তবে আইসিইউতে রোগীর চিকিৎসা যথাযথ ছিল। সব ব্যবস্থাপনার পর রাহিবের মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক।
তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, অধ্যাপক মামুন আল মাহতাবের (স্বপ্নীল) নেতৃত্বে ডা. সুনান বিন ইসলাম ও ডা. মো. নাসিফ শাহরিয়ার ইসলামের অংশগ্রহণে আট ৮ সদস্যের টিম চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাহিব রেজার এন্ডোস্কোপি করেন। চারদিন পর এন্ডোস্কোপি পরবর্তী জটিলতায় ১৯ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন রোগী। এমনকি চেতনানাশক প্রয়োগ করে এন্ডোস্কোপি করার জন্য রাহিব রেজা একজন উচ্চঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। তার ওজন বেশি ছিল (১২২ কেজি), তার অস্বাভাবিক ইসিজি এবং হৃদরোগ ছিল (ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ, ডাইলেটেড কার্ডিওমায়োপ্যাথি, লেস্ট ভেন্ট্রিকুলার ওয়াল গ্লোবাল হাইপোকাইনেসিয়া, রিডিউসড এলভি সিস্টোলিক ফাংশন ইএফ-৪৩ শতাংশ এবং পালমোনারি হাইপারটেনশন)।
রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়, রোগীর এন্ডোস্কোপি পরীক্ষার পূর্বে প্রাক-পরীক্ষা মূল্যায়ন এবং সতর্কতা পর্যাপ্ত ছিল না (এন্ডোস্কোপি এবং সিডেশনের আগে ঝুঁকি স্তরবিন্যাস কার্ডিয়াক, পালমোনারি এবং এয়ারওয়ে মূল্যায়ন)। রোগীর নিজের বা তার আইনি অভিভাবকের কাছ থেকে একটি বৈধ সম্মতিপত্র নেওয়া প্রয়োজন ছিল। এর পরিবর্তে ল্যাবএইড এন্ডোস্কোপি টিম রোগীর বন্ধুর স্বাক্ষরিত সম্মতিপত্র গ্রহণ করেছে।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, এন্ডোস্কোপি পরীক্ষার দিন তালিকায় অতিরিক্তসংখ্যক (৬৭ জন) এন্ডোস্কোপি ছিল যা একটি সেশনে একজন এন্ডোস্কোপিস্ট দ্বারা সম্পন্ন হওয়ার জন্য অনেক বেশি। ফলশ্রুতিতে প্রতি রোগীর জন্য বরাদ্দকৃত সময় অল্প হওয়ার কারণে অকার্যকর ও বিরূপ ফলাফল হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এমনকি একজন ঝুঁকিপূর্ণ রোগীকে চেতনানাশক ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে এন্ডোস্কোপি পরীক্ষার জন্য (পরীক্ষাকালীন ও পরীক্ষা পরবর্তী মনিটরিংসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ) প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ চিকিৎসক (এনেস্থেসিওলজিস্ট) নিশ্চিত করা হয়নি।
আরটিভি/এমএ -টি