ঢাকামঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

ভেসে থাকা এগুলো পচা খড় নয়, কৃষকের স্বপ্ন

হোসাইন তারেক, সুনামগঞ্জ ঘুরে এসে

বুধবার, ০৩ মে ২০১৭ , ০৫:২১ পিএম


loading/img

আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে দেশের হাওরাঞ্চল। অন্য সময় এপ্রিলের শেষ দিকে হাওরে পানি আসলে এবার তা এলো মার্চের শেষে। ফলে একমাস আগে আসা পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ৯০ লাখ কৃষকের স্বপ্ন।

বিজ্ঞাপন

দেশের হাওরাঞ্চলের মানুষের আয়ের প্রধান উৎস বোরো ফসল। কিন্তু আগাম বন্যায় তা পানির নিচে চলে যাওয়া কোনো ফসলই ঘরে তুলতে পারেনি তারা। সারা বছরে একটি মাত্র ফসল বোরো উৎপাদন হয় হাওরে। আর তা বিক্রি করে চলে সংসারের খরচ, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া, বিয়ে ও তাদের ভবিষৎ গড়া।

হাজারো কৃষকের এমন স্বপ্ন এখন হাওরের পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গেলো একমাসেরও বেশি সময় প্রাণপণ চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি কোনো ফসল। এর আগেও অতি বৃষ্টি ও ফসল রক্ষা বাঁধে নিম্নমানের কাজের কারণে হাওরের হাজার হাজার হেক্টর বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কিন্তু এবারের ভয়াবহতা আগের চেয়ে বেশি।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে সুনামগঞ্জের কয়েকটি হাওর ঘুরে দেখা যায়, পানিতে ভাসছে ধানের খড়। এগুলো পচা খড় নয় যেন কৃষকের স্বপ্ন। গেলো বারের চেয়ে এবার হাওরে বোরো ফলন ভালো হয়েছিলো। যা নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে কৃষকদের। কিন্তু ধান ঘরে তোলার ঠিক আগ মুহূর্তে বানের পানিয়ে সব চুরমার করে দিলো।

শাল্লা কৃষক শিপন আহমেদ বলেন, ২৮ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলাম। একটা ধানও কাটতে পারিনি। যখন পানি আসে তখন জমি দেখতে গিয়েছিলাম। পানি ঢুকছে দেখে ফসল কাটতে যাই। কিন্তু গিয়ে দেখি আসা যাওয়ার মধ্যে সব ধান ডুবে গেছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এই ধান বিক্রি করে আমাদের সব খরচ চালাতে হয়। অন্য বছর পরিবারের খরচ মিটিয়ে কম করে হলেও দেড় থেকে দু’ লাখ টাকা বাড়তি থাকতো। কিন্তু এবার যা খরচ হয়েছে তার এক পয়সাও বাঁচাতে পারিনি।

বিজ্ঞাপন

শিপন মিয়া বলেন, পুরো বছর কি করে কাটবে আল্লাহ ভালো জানেন। ধান রোপন করতে ধার দেনা করেছি সেটা কি করে পরিশোধ করব? এরই মধ্যে ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা টাকা কি করে দিব। কোথায় পাব?

দিরাইয়ের আরেক কৃষক শামসু শেখ বলেন, ধান বেচা টাকা দিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ দেই। এবার ইচ্ছে ছিলো বড় ছেলেকে বিদেশ পাঠাবো। কিন্তু সব ফসল তলিয়ে গেছে এখন কিভাবে সংসার চলবে আমার। সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাবো কি দিয়ে। কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

তিনি বলেন, গেলো কয়েক মাস আগে মেয়ের বিয়ে ঠিক করে রেখেছি। ফসলের ফলনও ভালো হয়েছে। আশা ছিলো ধান বেচা টাকা দিয়ে বিয়ের আনু্ষ্ঠানিকতা শেষ করবো। কিন্তু সব আশা বিফলে গলো। এখন মেয়ের বিয়ে দেব কি করে তাও বুঝে উঠতে পারছি না।  

এইচটি/ এমকে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |