ভারতের বেঙ্গালুরুর বার্থুর হ্রদ থেকে শহরে ছড়িয়ে পড়ছে বিষাক্ত ফেনা। দেখে মনে হয়, আকাশের মেঘ যেন নেমে এসেছে মাটিতে। তবে চোখজুড়ানো এ ফেনা কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো না। শরীরে লাগলে শুরু হচ্ছে চুলকানি। আর রয়েছে বিকট গন্ধও।
শুভ্র ওই ফেনা তৈরি হয়েছে বেঙ্গালুরুর বার্থুর হ্রদে। বৃষ্টির ফলে হ্রদটিতে তৈরি হয়েছে এ ফেনা। বাতাসে সেগুলো উড়ে গিয়ে হ্রদের পার্শ্ববর্তী রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ছে।
অনেকে অপেক্ষা করছেন কখন সরে যাবে এগুলো। এর ফলে দেখা দিয়েছে যানজট। সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক কর্মকর্তাদের।
এবার বেশ আগেভাগেই বর্ষা এসেছে বেঙ্গালুরুতে। এতে অসহনীয় গরম থেকে কিছুটা রেহাই পেয়েছে বাসিন্দারা। তবে নতুন উপদ্রব হিসেবে দেখা দিয়েছে এ বিষাক্ত ফেনা। ভারথুর লেকের পাশের হোয়াইটফিল্ড মূল সড়ক ছেয়ে গেছে সাদা মেঘের ফেনায়।
হোয়াইটফিল্ড রাইজিং নামের একটি নাগরিক গোষ্ঠীর সদস্য প্রবীর বি বলেন, গেলো শনিবার সকাল থেকে রাস্তায় উড়ছে এ বিষাক্ত ফেনা। এগুলো মূলত লেকের পানিতে ভাসছে। বাতাসের তোড়ে উড়ে চলে আসছে রাস্তার পাশের সড়কে। পুরো সড়ক এ বিষাক্ত ফেনায় ভরে যাবার যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। আরেকটা আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, হেলমেট পরা থাকলেও এ সাদা ফেনাগুলো ভেতরে ঢুকে ত্বকের ক্ষতি করে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এ বিষাক্ত সাদা ফোমের কারণে তাদের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। লেকের পাশের একটি হাসপাতাল ও বিপণিকেন্দ্রেও এগুলো উড়ে যাচ্ছে।
সড়কে উড়ে বেড়ানো এ ফেনার ছবি ও ভিডিও ফেসবুকের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
প্রথম দিকে বেঙ্গালুরু পুরসভা বিষয়টিকে তেমন একটা আমল দিতে চায়নি। কিন্তু রোববার পরিস্থিতি আরও জটিল হতে শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ জানাতে শুরু করেন, ওই ফেনা গায়ে লাগলেই শরীরের সেই অংশটি চুলকাচ্ছে। জ্বালা করছে। এবং লালও হয়ে যাচ্ছে। এর পরেই খবর দেয়া হয় ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের।
ফেনার নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় ল্যাবরেটরিতে।
প্রাথমিক ভাবে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, ওই সাদা রঙের ফেনা অত্যন্ত বিষাক্ত। তা রাসায়নিক ভাবেই তৈরি হয়েছে। ফেনা যাতে কোনও ভাবেই গায়ে না লাগে, সে জন্য সকলকে সতর্ক থাকতে বলেছেন তারা। তবে ওই রাসায়নিক ফেনা আসলে কী, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি।
বেশ কয়েকটি পরীক্ষার পরেই এ বিষয়ে নিশ্চিত করে জানানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রাথমিক ভাবে তারা জানিয়েছেন, লেকের জল দূষিত হয়ে যাবার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। প্রায় ১৮০ হেক্টর বিস্তৃত ভার্থুর লেক বেঙ্গালুরুর সবচেয়ে বড় লেকগুলির অন্যতম একটি। কিন্তু আশপাশের বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য, বিষাক্ত রাসয়নিক এবং আবর্জনা এসে জমা হয় ওই জলাশয়ে। ফলে জলাশয়টির জল অত্যন্ত দূষিত।
এলাকার এক বাসিন্দা প্রবীর বি জানিয়েছেন, ফেনা গায়ে লাগলেই সেই জায়গাটা চুলকাতে শুরু করছে। কিছুটা পরেই জায়গাটা লাল হয়ে যাচ্ছে। আর জ্বালাও করছে। পরিস্থিতি শীঘ্রই স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে পুরসভা। কিন্তু স্বাভাবিক তো দূরের কথা, গেলো তিন দিনে ফেনার পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ফেনার হাত থেকে গা বাঁচিয়ে চলা কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছে। বিষাক্ত ফেনা শহরের বড় রাস্তাগুলিতে ছড়িয়ে পড়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে যান চলাচলেও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশদূষণের কারণে এমনটা হচ্ছে। অথচ কর্তৃপক্ষ দূষণ কমানোর ব্যাপারে কোনো ধরনের পদক্ষেপই নিচ্ছে না।
এপি