ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সুইপাররাও চিকিৎসা দেয়। এখানকার সবাই বিশেষজ্ঞ, সুইপার কিংবা আয়া যেই হোক না কেন! তবে তাদের চিকিৎসায় মানুষ মারা যেতেই পারে! ডাক্তারদের হাতেও তো রোগী মরছে অহরহ।
গেল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় হাসপাতালে এক ঝাড়ুদারের ‘চিকিৎসায়’ রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বিকেলে হাসপাতালের ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে বিপ্লব মণ্ডল (২৬) নামের ওই রোগীর মৃত্যু হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
বিপ্লব হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে স্বজনরা চিকিৎসককে ডাকতে গিয়ে পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে স্টেথেস্কোপ ও হাতে অক্সিজেনের মাস্ক নিয়ে একজন চিকিৎসা দিতে আসেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি বিপ্লবের মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরানোর কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি মারা যান।
চিন্তা করা যায় আমাদের স্বাস্থ্যসেবা কোথায় নেমে গেছে। যাদের টাকা আছে তারা তো বেঁচে যাবেন। কিন্তু যাদের নেই তারা কি করবে? তাদের অবশ্য কিছু করারও নেই। অসুস্থ হয়ে তিনদিন হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে থাকবে। ওয়ার্ড বয় বা ঝাড়ুদার চিকিৎসা দেবে। ভাগ্য ভালো হলে বাড়ি যাবে, না হয় বিপ্লবের মতো উপরে!
বিপ্লবের বাবা বিনোদ মণ্ডল বললেন, বৃহস্পতিবার ঢাকার কেরানীগঞ্জে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আমার ছেলে আহত হন। সেদিনই তাকে ঢামেকের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। কিন্তু আঘাত তত গুরুতর ছিল না। শুক্রবার দুপুরেও ছেলে স্পষ্টভাবে আমাকে বলেছে- বাবা আমি সুস্থ হয়ে গেছি। আপনি কাল সারা রাত অনেক কষ্ট করেছেন। বাড়ি যান।
বিকেলে বিপ্লব হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে স্বজনরা চিকিৎসককে ডাকতে গিয়ে পাননি। একপর্যায়ে গলায় স্টেথেস্কোপ ঝুলিয়ে ও হাতে অক্সিজেনের মাস্ক নিয়ে একজন চিকিৎসা দিতে আসেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি বিপ্লবের মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরানোর কিছুক্ষণের মধ্যে সে মারা যায়।
পরে জানা যায়, ওই ব্যক্তি হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়। কেউ কেউ আবার বলছে, তিনি ঝাড়ুদার। নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে ওই ব্যক্তি জানান, তার নাম সুমন। জরুরি বিভাগের সরদার আজিজ তাকে ঢামেকে কাজ করতে নিয়ে এসেছেন। তবে তিনি সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত নন।
রোগীর স্বজনদের প্রশ্ন, ঝাড়ুদার কেন চিকিৎসা দিতে আসবে? সুমন অবশ্য বলছেন, রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়েছে বলে চিকিৎসকের নির্দেশে তাকে নেবুলাইজার দিয়েছেন তিনি। তবে কোনো চিকিৎসক তাকে এই নির্দেশ দিয়েছেন, তা তিনি জানাতে পারেননি।
এখন বুঝতে পারছি মানুষ কথায় কথায় কেন বলে- টাকা গেলেও ওই হাসপাতাল ভালো। আর ভালো বলতে প্রাইভেট হাসপাতালকেই তারা বোঝায়। আজ পর্যন্ত আমি কাউকেই বলতে শুনিনি- ভাই সদরে (সদর হাসাপাতাল) নিয়ে যান, এটা ভালো হবে। উল্টো শোনা যায়- সদরে চিকিৎসা দেয়া হয় না।
তবে আমি ওই মানুষদের মতো ঢালাওভাবে বলবো না যে, সদর হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেয়া হয় না। সেখানে ভালোই চিকিৎসা দেয়া হয়। এমনকি চাহিদা থেকে অনেক বেশিও দেয়া হয়। কিন্তু একটা ভুল পুরো ভালোটাকে নষ্ট করে দেয়। যেমন এক বালতি দুধের মধ্যে এক ফোঁটা চোনা দিলে যে রকম হয়!