দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার (৩০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত স্টার্কফন্টেইন গুহাগুলো প্রায় তিন বছর আগে বন্যার কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এপ্রিল মাসে পুনরায় চালু হওয়ার পর এবার একটু ভিন্নভাবে—পর্যটকদের আরও কাছ থেকে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের অভিজ্ঞতা নিতে এই উদ্যোগ। এই গুহাসমূহ ‘ক্রেইডল অব হিউম্যানকাইন্ড’ (মানবজাতির সূতিকাগার) বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের অন্তর্গত, যা প্রত্নতাত্ত্বিকদের জন্য বহু দশক ধরে একটি সমৃদ্ধ নিদর্শনের উৎস।
এখানে ১৯৯০-এর দশকে প্রথম খুঁজে পাওয়া ছোট আকৃতির হাড়ের ভিত্তিতে নামকরণ করা হয় ‘লিটল ফুট’। এখন পর্যন্ত এটি মানব পূর্বপুরুষদের সবচেয়ে সম্পূর্ণ জীবাশ্ম হিসেবে বিবেচিত, যার বয়স আনুমানিক ১৫ থেকে ৩৭ লাখ বছর।
লিটল ফুট ছিল অস্ট্রালোপিথেকাস গোত্রের, যার অর্থ লাতিনে ‘দক্ষিণের বানর’। এরা আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ হিসেবে বিবেচিত, যাদের শরীরে একসঙ্গে ছিল বানরসুলভ ও মানুষের বৈশিষ্ট্য।
এখানে আসা ৪০ বছর বয়সী মোলেফে বলেন আমার লক্ষ্য এখানে গুরুত্বপূর্ণ কোনো হাড় খুঁজে পাওয়া।
২০১৩ সালে খননদলে যোগ দেওয়ার পর তার সবচেয়ে মূল্যবান আবিষ্কার ছিল একটি প্রাচীন মানবের হাতের হাড়। তার পিতা ছিলেন সেই দলটির সদস্য যারা এই গুহা থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে আলোচিত জীবাশ্ম—‘লিটল ফুট’—আবিষ্কার করেছিলেন।
গুহা এবং কাছাকাছি জাদুঘরটি পরিচালনাকারী উইটওয়াটারসর্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন নিথায়া চেট্টি বলেন, এটি পুনরায় চালু হওয়া আমাদের দর্শনার্থীদের মানবজাতির উৎপত্তির গোড়ার কথা জানানোর এক গুরুত্বপূর্ণ নতুন ধাপ। এখন দর্শকেরা চলমান গবেষণা ও বিজ্ঞানের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ার অনন্য সুযোগ পাচ্ছেন।
কোভিড-১৯ মহামারির আগে গুহাগুলোতে বছরে প্রায় এক লাখ পর্যটক ভিড় করতেন। বাসে করে আসা শিক্ষার্থীদের দল ও কৌতূহলী দর্শনার্থীদের কথা স্মরণ করে উইটওয়াটারসর্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ ডমিনিক স্ট্র্যাটফোর্ড বলেন, বন্ধ থাকাকালীন একধরনের শূন্যতার অনুভূতি ছিল। তাই যেন মনে হচ্ছিল কিছু একটা আমাদের মধ্যে নেই।
জাদুঘরে এখন একটি অস্থায়ী জীবাশ্ম প্রদর্শনী চালু করা হয়েছে, যেখানে দর্শনার্থীরা ১৯৪৭ সালে আবিষ্কৃত অস্ট্রালোপিথেকাস আফ্রিকানাস প্রজাতির সবচেয়ে সম্পূর্ণ খুলি ‘মিসেস প্লেস’-কেও দেখতে পাবেন।
প্রত্যক্ষদর্শী হেলমেট পরা দর্শকদের ২.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ গুহায় নিয়ে যান ট্যুর গাইড ট্রেভর বুটেলেজি। নীল এলইডি আলোয় আলোকিত সেই গুহায় এক জায়গায় ইশারায় দেখান এক গোপন সুড়ঙ্গ, যা নিয়ে যায় একটি ভূগর্ভস্থ হ্রদের দিকে।
'এটা আসলে এক অসাধারণ গহ্বর, 'বলেন ৩৪ বছর বয়সী পর্যটন গ্র্যাজুয়েট, যার কণ্ঠ ধ্বনিত হচ্ছিল গুহার দেয়ালে। দক্ষিণ আফ্রিকার খ্যাতনামা পুরাতত্ত্ববিদ ফিলিপ টোবিয়াসের একটি উদ্ধৃতি উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, 'আফ্রিকাই মানবজাতির জন্ম দিয়েছে—এটা ছোট কিছু নয়।'
তবে ‘লিটল ফুট’-এর আসল জীবাশ্ম দেখতে হলে দর্শনার্থীদের অপেক্ষা করতে হবে সেপ্টেম্বর মাসের হেরিটেজ মাস পর্যন্ত। প্রায় দুই দশক ধরে খনন ও পুনর্গঠন করা এই কঙ্কাল কেবল বিশেষ উপলক্ষেই প্রদর্শিত হয়।
সূত্র: এএফপি
আরটিভি/এমএ/এআর