ইরান-ইসরায়েল সংঘাত দিনদিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। দুই দেশই একে অপরকে লক্ষ্য করে শত শত মিসাইল ছোড়ার পাশাপাশি নিয়মিত ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, যা গড়িয়েছে সপ্তম দিনে। বর্তমানে ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালাচ্ছে ইরান।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুই দেশের সংঘাত নিয়ে আজকের আরও কিছু তথ্য তুলে ধরেছে বিবিসি।
ইসরায়েলে যা হয়েছে—
দক্ষিণ ইসরায়েলের বেয়ারশেবার সোরোকা হাসপাতাল ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই হামলার ফলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনির ‘অস্তিত্ব আর থাকতে দেওয়া যাবে না’।
ইরান বলেছে, তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল হাসপাতালের কাছে থাকা একটি সামরিক স্থাপনা।
তেল আভিভ ও রামাতগনসহ ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি এলাকায় রাতভর হামলা চালিয়েছে ইরান, যেখানে কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ইসরায়েলের অংশীদারিত্বের প্রশংসা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এ ছাড়া তেহরানের শাসকদের চড়া মূল্য দিতে হবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ সেনাবাহিনীকে ইরানের বিরুদ্ধে ‘হামলা তীব্র’ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইরানে যা হয়েছে—
ইরানের আরাক পারমাণবিক চুল্লি ও নাতাঞ্জসহ বিভিন্ন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থাকে হামলার কথা জানিয়েছে ইরান।
ইরানের রাষ্ট্রপতি মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, আমরা এই কঠিন দিনগুলো কাটিয়ে উঠব।
হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ইরানে এ পর্যন্ত নিহত ৬৩৯, আহত ১ হাজার ৩২০ জন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি জনগণের উদ্দেশে বলেছেন, শত্রু যদি বুঝতে পারে আপনি তাদের ভয় পাচ্ছেন, তাহলে তারা আপনাকে ছাড়বে না।
অন্যান্য—
ইরানে ইসরায়েলের চলমান হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়াবে কি না, সে সিদ্ধান্ত এখনও নেননি বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, একেবারে শেষ মুহূর্তে আমি সিদ্ধান্ত নেব।
ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রকে না জড়াতে হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে।
সিবিএস জানিয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে আক্রমণের পরিকল্পনা অনুমোদন করলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে আমেরিকার হস্তক্ষেপ পরিবেশকে আরেকটি ভয়াবহ উত্তেজনার দিকে নিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, গত ১২ জুন দিনগত রাত হঠাৎ ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযানে রাজধানী তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ও আবাসিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইহুদিবাদী সেনারা।
হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, দেশটির ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি, খাতাম আল-আনবিয়া সদরদপ্তরের কমান্ডার ও বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদ ও ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানীসহ অন্তত কয়েকশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ইসরায়েলের হামলার পর পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে শুক্রবার রাতে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩ নামে’ অভিযান শুরু করে ইরান। তেহরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ভেদ করে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছে। এতে হতাহত কম হলেও ইসরায়েলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। ইরানের হামলার ভয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ইহুদিবাদীরা। দুই দেশের মধ্যে সংঘাত এখনও চলমান রয়েছে।
আরটিভি/আরএ