ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় উঠে এসেছে হরমুজ প্রণালি। বিশেষ করে, ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং কৌশলগত এই সমুদ্রপথটি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে হরমুজ প্রণালি বন্ধের পদক্ষেপ নিয়েছে ইরান। দেশটির পার্লামেন্টও বন্ধের অনুমোদন দিয়েছে। তবে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ।
হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে শুধু পরিবহণ খরচ বাড়াবে না, বরং অনেক দেশের অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি ও মন্দার কারণ হতে পারে। ভেঙে পড়তে পারে বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে হুট করে বেড়ে গেছে জ্বালানি তেলের দাম। যদিও এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহে বড় ধরনের কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি। খবর সিএনএন
বিশ্ব অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান খুব কমই আছে। পারস্য উপসাগর এবং ওমান উপসাগরের মধ্যে অবস্থিত এই জলপথটি (হরমুজ প্রণালি) তার সংকীর্ণতম স্থানে মাত্র ২১ মাইল প্রশস্ত। তেল সমৃদ্ধ পারস্য উপসাগর থেকে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে অপরিশোধিত তেল পরিবহনের এটিই একমাত্র উপায়। ইরান এর উত্তর দিক নিয়ন্ত্রণ করে।
মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসন (ইআইএ) অনুসারে, প্রতিদিন প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল, যা দৈনিক বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এই প্রণালী দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এদিকে, ২১ জুন রানে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলার পর বিশ্বব্যাপী বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুডের দাম সাময়িকভাবে প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলারের ওপরে উঠে যায়। রিফিনিটিভের তথ্য অনুসারে, জানুয়ারির পর প্রথমবারের মতো এটি ঘটেছে। সংঘাতের আগে, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে দাম মূলত ৬০ থেকে ৭৫ ডলারের মধ্যে ছিল।
তেলের দাম আরও বাড়বে কিনা তা ইরানের প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করছে। জ্বালানি বিনিয়োগ সংস্থা টর্টোয়েজ ক্যাপিটালের সিনিয়র পোর্টফোলিও ম্যানেজার রব থামেল জানান, ইরান নিয়ন্ত্রিত সমুদ্র পথে সম্ভাব্য ব্যাঘাতের ফলে তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারে উন্নীত হতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতি ঠিক রাখতে হরমুজ প্রণালীর কার্যকর থাকা খুবই জরুরি।
গুরুত্বপূর্ণ এই সমুদ্রপথটি বন্ধ হয়ে গেলে বিশেষ করে এশিয়ার অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে, কারণ এই পথ দিয়ে যে অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস পাঠানো হয় তার ওপর নির্ভরশীল এশীয় অর্থনীতি। ইআইএ’র অনুমান, গত বছর হরমুজ প্রণালী দিয়ে আসা ৮৪ শতাংশ অপরিশোধিত তেল এবং ৮৩ শতাংশ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এশিয়ার বাজারে গেছে।
এ ছাড়া ইরানের তেলের বৃহত্তম ক্রেতা চীন এই বছরের প্রথম প্রান্তিকে হরমুজ প্রণালি দিয়ে প্রতিদিন ৫ দশমিক ৪ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করেছে, যেখানে ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া যথাক্রমে ২ দশমিক ১ মিলিয়ন এবং ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিন আমদানি করেছে। একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ যথাক্রমে মাত্র চার লাখ এবং পাঁচ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ইরান যদি হরমুজ প্রণালিটি বন্ধ করে তাহলে চীন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর এ কারণে চীন সরকারকে আমি উৎসাহিত করবো তারা যেন এ বিষয়ে (ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে) যোগাযোগ করে। প্রণালীটি বন্ধ হলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি কিছু প্রভাব আমাদের ওপর পড়বে।
হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা ইরানের জন্য আরেকটি ‘ভয়াবহ ভুল’ এবং ‘অর্থনৈতিক আত্মহত্যা’ অভিহিত করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এতে করে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাবে।
ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে এর বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের আছে বলেও জানান তিনি।
আরটিভি/আরএ/এআর