করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ আরও দুই সপ্তাহ বাড়িয়েছে সরকার৷ তবে এ সিদ্ধান্তের অনেকে ভিন্নমত পোষণ করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শিক্ষার ক্ষতি এতে আরও বাড়বে৷
৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি দেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানালেও বুধবার সকালে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আরও দুই সপ্তাহের জন্য বাড়ানো হচ্ছে। তবে বন্ধের মেয়াদ বাড়ানো হবে না, খুলে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও জীবনের কথা চিন্তা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
এর আগে করোনার কারণে ৫৪৪ দিন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল৷ গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বিধিনিষেধের আওতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়৷
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বিরুদ্ধে ইউনেস্কো অবস্থান নিলেও বাংলাদেশ তার নিজস্ব সিদ্ধান্তে ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়৷ এ করোনায় বিশ্বের কয়েকটি দেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে। তারমধ্যে বাংলাদেশ একটি।
অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য অভিজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী। তিনি বলেন, জাতীয় পরামর্শক কমিটির মতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করোনার হটস্পট নয়৷ তারপরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলো৷ আবার তা বাড়ানো হলো৷ সদ্য শেষ হলো বাণিজ্যমেলা, সবকিছু খোলা আছে৷ সবাই বাইরে যাচ্ছেন৷ মাস্ক পরার কোনো আগ্রহ নেই স্বাস্থ্যবিধি কেউ যেমন মানতে চাইছেন না। মানানোর ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগও নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের ঘরে রেখে কী লাভ! বাইরে থেকে যারা ঘরে ফিরছেন তারা তো স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। সুতরাং ঘরে থেকেও তারা সংক্রমিত হচ্ছে৷
অপরিকল্পিতভাবে সব হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বন্ধে শিক্ষার ক্ষতি আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ভিন্ন প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা সম্ভব ছিল৷ আমরা তো বছরের পর বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে পারি না৷ তাই যদি পালাক্রমে সপ্তাহে কমপক্ষে দুই দিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়, তাতে ক্ষতি কিছুটা হলেও কমানো যেত৷
এ সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা বাড়বে৷ বাড়বে বাল্যবিয়ে৷ আরও অনেক সমস্যা হবে৷ তাই সীমিত পরিসরে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সচল রাখা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
তবে জাতীয় পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা না হয় সেই বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে৷ শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে৷ আগে যেটা ছিল না৷
কিন্তু এবারের পর যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বন্ধ আর বাড়ানো না হয় সে বিষয়ে বলা হয়েছে।
তার মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা মানে হচ্ছে শিশুরা যেতে বাধ্য। সেটা আমাদের ভাবতে হবে।
এএইচ/এসকে