ঢাকারোববার, ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ২৩ চৈত্র ১৪৩১

পার্কে হাঁটতে গিয়ে হেনস্তার শিকার মা-সহ অটিজম যুবক

সৈয়দা মুনিরা ইসলাম

মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ০৭:২৭ পিএম


উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর পার্কে হাঁটতে গিয়ে দুর্ব্যবহার ও হুমকি-ধমকির শিকার হয়েছেন অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এক যুবক ও তার মা। এমনকি তাদেরকে আর কখনও পার্কে ঢুকতেও নিষেধ করে দেন সোসাইটির সহসভাপতি ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম লিটন। 

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর পার্কে এ ঘটনা ঘটে। অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মোহাম্মদ হোসেন ফারদিন মায়ের সঙ্গে হাঁটতে গিয়ে বেঞ্চে বসে থাকা এক নারীকে হাঁটার জন্য হাত ধরে টান দিলে ঘটনার সূত্রপাত। 

জানা যায়, ডায়বেটিসসহ নানান জটিলতা আক্রান্ত ফারদিনকে নিয়ে প্রতিদিনই উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর পার্কে হাঁটতে যান মা। পার্কে যাওয়ার পর ফারদিনও চান অন্যরা তার সঙ্গে হাঁটুক। তাই কাউকে বসে থাকতে দেখলে হাঁটার জন্য ডেকে নেয়। তেমনি গত শুক্রবার পার্কের বেঞ্চে বসে থাকা এক নারীর হাত ধরে টান দেন ফারদিন। তার উদ্দেশ্য ছিলে ওই নারীকে হাঁটানো। কিন্তু বিষয়টি নেতিবাচকভাবে নেন ওই নারী। বিষয়টি গড়ায় সোসাইটির কার্যালয় পর্যন্ত। ওই নারীকে বুঝিয়ে বলার পরও প্রতিবন্ধী ফারদিনকে পার্কে আটকে রাখা হয়। একপর্যায়ে ওয়েলফেয়ার সোসাইটির কার্যালয়ে নিয়ে পুলিশে দেওয়ার এবং বাথরুমে আটকে রাখার ভয় দেখানো হয়।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে ফারদিনের মা বলেন, ফারদিন মেয়েটির হাত ধরেছে বলে অভিযোগ করে। মেয়েটি আমাকেও বলেছে। আমি বললাম, হাত ধরার মানে এটা নয় যে, ও তোমার সঙ্গে বাজে কিছু করবে। কারণ, ও অটিস্টিক বাচ্চা। ও কিছুই বোঝে না, একদম বাচ্চাদের মতো। হাত ধরার মানে হলো, ও হাঁটতে বলতেছে ওর সঙ্গে। এটাই ওর অপরাধ। তারপর তারা আমাকে বাসায় আসতে দেবে না, গেটে আটকে দিয়েছে। এতে আমার ছেলে সাংঘাতিক ভয় পেয়ে গেছে। আমি অনুরোধ করলাম, প্লিজ আমাকে বাসায় যেতে দিন। ও খুব দুর্বল, সিভিয়ার ডায়াবেটিসের রোগী। অটিস্টিক বাচ্চা, ও কথা বলতে পারে না। আমি শখ করে ওকে পার্কে আনিনি। তারপর আমাকে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। 

ফারদিনের বাবা বলেন, সহসভাপতি নিশ্চয়ই অশিক্ষিত-অজ্ঞ মানুষ না। সে শুধু প্রোরোচিত হয়ে কেন এই বাচ্চাটাকে, বাচ্চাটার মাকে এভাবে অপদস্ত করবে? আমরা চাই এটার একটা সুষ্ঠু সমাধান হোক, ওরা যাতে সব জায়গায় চলাফেরা করতে পরে। 

বিজ্ঞাপন

তবে অভিযোগ দায়েরকারী নারীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। জোর করে অঙ্গীকার নেওয়া উত্তরা ১১নং সেক্টর সোসাইটির সহসভাপতি ড. মো রফিকুল ইসলাম লিটন বলেন, প্রতিব্ন্ধীরা পার্কে হাঁটার উপযুক্ত নয়। অভিযোগের ভিত্তিতে আমি তাদের ডাকিয়েছি। যেহেতু ছেলেটির মানসিক সমস্যা, ভবিষ্যতে আরও বড় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে, এ জন্য পার্কে আর আসবে না মর্মে একটি অঙ্গীকার নিয়েছি। 

যদিও ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সোসাইটির সভাপতি আলতাফ হোসেন সরকার বললেন, এই পার্ক সবার জন্য উন্মুক্ত। ফারদিনের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা কোনো অবস্থাতেই ঠিক হয়নি। আমি মনে করি, সামাজিক কর্মী হিসেবে এইসব বাচ্চাদের প্রতি বাড়তি যত্নবান হওয়া উচিত। আমাদেরও একটা দায়বদ্ধতা আছে তাদের প্রতি।  


ফারদিনের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে অমানবিক বললেন সোসাইটির আরেক সদস্য। 

উত্তরার সব পার্কে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলাচল নির্বিঘ্ন করার আহ্বান জানিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর শরীফুল রহমান বললেন, অটিজম বাচ্চার সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের আচরণ না হয়, মাঠকর্মী যারা আছেন তারা এই বিষয়ে দৃষ্টি রাখবেন। মাঠে যাতে অটিজম বাচ্চারা শান্তিতে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে, মায়েরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে বাচ্চাদের শারীরিক বিকাশে মাঠে নিয়ে আসতে পারে। সব বাচ্চার যাতে মাঠে প্রবেশাধিকার থাকে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। 
 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |