হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হয়েছে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের ঘরে ঘরে ঢাক-কাঁসরের বাদ্যি-বাজনা, রাত্রি উজ্জ্বল করা আরতি ও পূজারী-ভক্তদের পূজা-অর্চনায় কেবলই মা দুর্গার বিদায়ের আয়োজন। মর্ত্যলোক ছেড়ে বিদায় নিলেন মা দুর্গা। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে অশ্রু সজল চোখে ভক্তরা বিদায় দিলেন দুর্গাকে। শেষ হলো দুর্গাপূজা।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ চোখের জলে বিদায় দিয়েছেন মা দেবী দুর্গাকে, বিসর্জন দিয়েছেন প্রতিমা। আসছে বছর আবারও এ মর্ত্যলোকে ফিরে আসবেন দুর্গা– এমন প্রার্থনাই বিদায় দিলেন মাকে।
অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ, কল্যাণ ও সব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে নিরন্তর শান্তি-সম্প্রীতির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গত শনিবার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ উৎসব।
সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার ঘোড়ায় চড়ে স্বর্গলোক থেকে পৃথিবীতে এসেছিলেন। বিদায়ও নিয়েছেন ঘোড়ায় চড়ে।
দেবী বিসর্জনের দিনে বিষাদের পাশাপাশি উৎসবমুখর ছিল রাজধানীসহ পুরো দেশ। এবার ঢাকা মহানগরীর ২৪৬টিসহ দেশের ৩২ হাজার ৪০৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে বসে মেলা। পূজা শেষ হলেও কোথাও কোথাও এ মেলা চলবে আরও দু-তিন দিন।
এবার পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসবের বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জন ছিল মূল আকর্ষণ। বিকেল ৩টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপ প্রাঙ্গণ থেকে একযোগে শুরু হয় বর্ণিল শোভাযাত্রা। ভক্তদের নাচ-গানে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। তারা রং ছিটিয়ে, ঢাকঢোল পিটিয়ে উৎসবমুখর করে তোলেন চারদিক।
ঢাকেশ্বরী মন্দির পূজামণ্ডপ থেকে রাজঘট ও নবপত্রিকা (কলা বউ) নিয়ে আসার পর শুরু হয় শোভাযাত্রা।
পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটিসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের নেতৃত্বে ট্রাকবাহী প্রতিমাসহ বিচিত্র সাজ পোশাকে সজ্জিত নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, যুবকরা হেঁটে ও বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে শোভাযাত্রায় যোগ দেন। অনেকেই দুর্গা, শিব, মহিষাসুরসহ পৌরাণিক চরিত্রের নানা সাজে অংশ নেন। রাস্তার দু’পাশে, আশপাশের ভবনের ছাদ-বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনেকে শোভাযাত্রাকে স্বাগত জানান।
শোভাযাত্রা ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পেরিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট মাজার, রেলওয়ে হাসপাতাল, নগর ভবন, গোলাপ শাহ মাজার, গুলিস্তান, নবাবপুর রোড ও বাহাদুর শাহ পার্ক হয়ে বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটে গিয়ে পৌঁছে। সেখানে ‘দুর্গা মায়ের জয়’, ‘আসছে বছর আবার হবে’ ইত্যাদি ধ্বনি ও উৎসবমুখর পরিবেশে নৌকাগুলো মাঝনদীতে গিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দেয়। বিসর্জনের এ পর্ব চলে রাত পর্যন্ত।