৪৩ বছর ধরে হজ ও ওমরাহ করা কে এই বাংলাদেশি আলেম

আরটিভি নিউজ

সোমবার, ১৯ মে ২০২৫ , ০৬:৩২ পিএম


৪৩ বছর যাবৎ হজ করা কে এই বাংলাদেশি আলেম
আল্লামা আব্দুল হামিদ। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

প্রতিটি মুমিন বান্দার ইবাদতের গভীরে থাকে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা। তার মধ্যে হজ আল্লাহ প্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাই হজের সময় হলেই আল্লাহ প্রেমিকরা ব্যাকুল হয়ে ছুটে যান আল্লাহর ঘর কাবায় এবং প্রিয়নবি (সা.)-এর রওজায়। ব্যাকুল প্রার্থনায় কবুল করিয়ে নেন বারবার শাহী দরবারে হাজিরের সুযোগ।

বিজ্ঞাপন

আল্লাহর দরবারে বারবার হাজির হওয়া এমনি একজন ব্যক্তিত্ব আল্লামা আব্দুল হামিদ, যিনি মধুপুরের পীর হিসেবে খ্যাত। তিনি বাংলাদেশের একজন বরেণ্য আলেম ও আধ্যাত্মিক রাহবার। 

দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে নানামুখী দ্বীনি খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। হজ ও কাবার প্রেম এই আলেমের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এখন পর্যন্ত ২৯ বার হজ এবং অসংখ্যবার ওমরাহ পালন করেছেন আব্দুল হামিদ। জীবনের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত রমজান মাসে নিয়মিত ইতিকাফ করেছেন পবিত্র মক্কা ও মদিনায়।

বিজ্ঞাপন

ঢাকার অদূরে বিক্রমপুরে জন্ম হামিদের। কাবার প্রতি তার মনের এই টান ছাত্রজীবন থেকেই। পড়াশোনা করেছেন বৃহত্তর নোয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম আল হুসাইনিয়া ওলামা বাজার মাদরাসায়। ১৯৬৮ সালে তাকমিল (মাস্টার্স) পড়ার সময় একদিন মক্কা-মদিনা জিয়ারতের সুযোগ চেয়ে পড়েছিলেন সালাতুল হাজাত। অশ্রুভেজা চোখে দোয়া করেছিলেন মহান রবের দুয়ারে।

আরও পড়ুন

এরই মধ্যে মক্কা-মদিনায় জিয়ারতের সুযোগও পেয়েছেন কয়েকবার। এবারও হাজির হবেন মহান রবের দরবারে। এবার তার ২৯তম হজ। মাদরাসার প্রয়োজনে প্রথমে এ বছর তিনি হজে যাবেন না ভেবেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহর এক বান্দার বিশেষ অনুরোধে যেতে হয় তাকে।

বিজ্ঞাপন

মাদরাসা থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শিক্ষক ও ছাত্রদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘ছাত্রজীবনে দেখা সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা আমার এখন বুঝে এসেছে। হাফেজ্জি হুজুর (রহ.) হজ শুরু করার পর আমৃত্যু তিনি প্রতিবছর হজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। আমাকেও হয়তো আল্লাহ প্রতিবছর হজ করার সুযোগ দেবেন।’

বাস্তবেও হয়েছে তাই। এরপর প্রায় প্রতিবছরই আল্লাহ তাকে হজ করার সুযোগ দিয়েছেন। সর্বজন শ্রদ্ধেয় বুজুর্গ আলেম মোহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর (রহ.) যে বছর শেষবারের মতো হজে যান, সে বছর ঢাকায় সাংবাদিকরা তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘হুজুর! জীবনে আপনি কতবার হজ করেছেন?’ উত্তরে হুজুর বলেন, কতবার হজ করেছি তা তো মনে নেই, তবে চল্লিশের বেশিই হবে।’ 

হাফেজ্জি হুজুরের রুহানি সন্তান আল্লামা আব্দুল হামিদ এ পর্যন্ত হজ করেছেন ২৯ বার। ওমরাহ করেছেন অসংখ্যবার। কোনো কোনো বছর তিনি দুই থেকে তিনবারও ওমরাহ করে থাকেন। রমজানে পবিত্র মক্কা ও মদিনায় ইতিকাফ করা ছিল তার দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক আমল। তবে বয়সের ভারে এখন প্রতিবছর রমজানে তিনি মক্কা ও মদিনায় ওমরাহ করতে যেতে পারেন না।

আল্লামা আব্দুল হামিদের কাছে হজের বিশেষ স্মৃতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৭৮ সালে আল্লাহ আমাকে প্রথমবার মক্কা-মদিনায় যাওয়ার সুযোগ দেন। ১৯৮৯ সালে আমার শায়খ ও মুর্শিদ শাহ আব্দুল হালিম (ওলামা বাজারের পীর) মারা যান। সে বছর আমি ইমামতির ভিসা নিয়ে দুই বছরের জন্য আমেরিকা যাই। কয়েক মাস পর দেশে ফেরার জন্য মনটা কেমন ছটফট করতে লাগে। এদিকে হজের সময়ও ঘনিয়ে এলো। 

‘এ বছর আমি হজে যেতে পারব না ভেবে একেবারে অস্থির হয়ে পড়ি। যোগাযোগ করি আমেরিকায় অবস্থিত পাকিস্তানি এক হজ এজেন্সির সঙ্গে। তারা ভিসার জন্য আমার কাছে এক হাজার ৪০০ ডলার দাবি করে। আমি রাজি হয়ে যাই। কিন্তু কয়েক দিন পর তারা জানায়, এখান থেকে বাংলাদেশিদের ভিসা হবে না। তাদের ভিসা করতে হলে বাংলাদেশ থেকে আবেদন করতে হবে। আমি নাছোড় বান্দা, আমি হজে যাবই। তারা আমাকে বিভিন্নভাবে বোঝাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। আমি আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করছি। দোয়া করছি।’

‘হজের ঠিক দুই দিন আগে ওয়াশিংটন থেকে একজন ফোন করে এজেন্সির লোকদের বলল, মাওলানা আব্দুল হামিদ নামে একজন হুজুর আছেন। বাংলাদেশের ঢাকায় বাড়ি। তাকে বলুন কাগজপত্র যেন এখনই ওয়াশিংটন পাঠিয়ে দেন। এখান থেকে তার ভিসা হবে। এজেন্সির লোকেরা কিছুতেই আমাকে ছাড়বে না। আমিও কিছুতেই মানছি না। শেষে তারা বলল, আপনি কাগজ নিতে চাইলে নিজ দায়িত্বে নেবেন।’ 

তিনি আরও বলেন, তারা আমাকে বললো ভিসা না হলে আমরা দায়ী থাকব না। আমি তাই মেনে নিলাম। কাগজপত্র তুলে দ্রুত ওয়াশিংটন পাঠিয়ে দিলাম। এক দিনের মধ্যে আমার ভিসা লেগে গেল। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সৌদির উদ্দেশে বিমানে উঠলাম। মুখে আমার হজের পবিত্র তালবিয়া। আর চোখে কৃতজ্ঞতার অশ্রু। কিভাবে সেদিন ভিসা হয়েছিল, কার মাধ্যমে হয়েছিল—আমি আজও তা জানতে পারিনি।

আরটিভি/এসআর

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission