পবিত্র কুরআনে একশ চৌদ্দটি সুরা আছে। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেকটি সুরারই নাম আলাদা আলাদা দিয়েছেন এবং হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টির পর সর্বপ্রথম তাকে বিভিন্ন জিনিসের নাম শিখিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ আদমকে সমস্ত বস্তু সামগ্রীর নাম শিখালেন। তারপর সে সমস্ত বস্তু সামগ্রীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর (আল্লাহ) বললেন (ফেরেশতাদেরকে) আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক। তারা বলল, তুমি পবিত্র আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে তুমি যা আমাদের শিখিয়েছ (সেুগুলো ব্যতীত)। নিশ্চয় তুমিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা।
আল্লাহ বললেন, হে আদম ফেরেশতাদেরকে বলে দাও এসবের নাম। তারপর যখন তিনি বলে দিলেন সেসবের নাম, তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আসমান ও জমিনের যাবতীয় গোপন বিষয় সম্পর্কে খুব ভালো করেই অবগত রয়েছি? এবং সেসব বিষয়ও জানি যা তোমরা প্রকাশ কর, আর যা তোমরা গোপন কর। (সুরা বাকারাহ, আয়াত: ৩১-৩৩)
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: কুরআন হেফজ করলেন মিশরের ১০ বছরের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ইসরা
--------------------------------------------------------
নাম হলো পরিচয় ও নিদর্শন। নামের আরবি হলো ‘ইসম’ ইসম অর্থ চিহ্ন, আলামত, পরিচিতি ইত্যাদি। মানুষ দুনিয়ায় আসার পর প্রথম যা লাভ করে তা হলো তার নাম পরিচয়। মৃত্যুর পর মানুষের নাম বেঁচে থাকে।
এমনকি হাদিস শরিফে আছে কিয়ামতের দিন নাম ধরেই মানুষকে ডাকা হবে আল্লাহর দরবারে। তাই শিশুর সুন্দর নাম তার জন্মগত অধিকার। শিশুর নাম রাখার অধিকারী হলেন, পিতা-মাতা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, ভাই-বোন, চাচা, ফুফু, মামা-খালা এবং তার আত্মীয়স্বজন। নাম রাখতে হবে সুন্দর অর্থবহ। সে ক্ষেত্রে কোন বিজ্ঞজন বা আলেমদের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। কারও নাম ভালো অর্থবহ না হলে তা পরিবর্তন করে রাখা যায়।
নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন সাহাবির এরূপ নাম পরিবর্তন করে রেখেছিলেন। সাধারণত জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করে নাম রাখা হয় বা নাম রাখার পর সুবিধামতো সময়ে আকিকা করে সন্তানের নাম উল্লেখ করে দোয়া করা হয়। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জন্মের সপ্তম দিনে নবজাতকের নাম রাখো। (তিরমিজি শরীফ)
অন্য এক হাদিসে আছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, সপ্তম দিনে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত হাসান (রা.) ও হজরত হোসাইন (রা.) এর আকিকা দিয়েছেন এবং তাদের নাম রেখেছেন। (বায়হাকি শরীফ)
কারও নাম মুহাম্মদ হলে অথবা নামের সঙ্গে মুহাম্মদ থাকলে তা সংক্ষেপে মোঃ মু, মোহং, মোহা, লেখা উচিত নয়, বরং পূর্ণরূপেই লেখা উচিত।
মুহাম্মদ শব্দটি বাংলায় মোহাম্মদ বা মহাম্মদ ইত্যাদি বিভিন্ন লেখা হলেও তার আরবি উচ্চারণ হলো মুহাম্মাদ, ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষায়ও মুহাম্মাদ শব্দটি পূর্ণরূপে লেখা জরুরি। আমাদের দেশে দেখা যায় নামের কিছু অংশ আরবি, কিছু অংশ ফারসি, কিছু উর্দূ, কিছু বাংলা এবং কিছু কিছু নামে একাধিক ভাষার শব্দের সংমিশ্রণও রয়েছে।
পুরা নাম যে কোনো একটি ভাষায়ই হওয়া বাঞ্জনীয়। নামের শুরুতে এক শব্দ, এক ভাষায়, মধ্যে বা শেষে অন্য ভাষায় এটা ঠিক নয়, এতে নামের সুন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় এবং অর্থ এলোমেলো হয়ে যায়। এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
মুসলমানরা কেন বিধর্মীদের নামের মতো নাম রাখরে। সুন্দর অর্থবহ নাম রাখবে মুসলমানরা এবং নামের মর্যাদা রাখার চেষ্টা করবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সুন্দর নাম রাখার তাউফিক দান করুক। (আমিন)
আরও পড়ুন:
এমকে