একদিকে বৈশ্বিক মহামারি, অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর পাঁচ দফা ভয়াবহ বন্যা। বছরের প্রায় শুরু থেকেই একের পর এক আঘাত হানে দেশের কৃষিখাতে। এরপরও, বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ বা কৃষিঋণ সহায়তার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় কৃষিখাত। হতাশার পাশাপাশি আছে আশার খবরও।
বিশ্বে ধান উৎপাদনে ইন্দোনেশিয়াকে টপকে তৃতীয় অবস্থানে এখন বাংলাদেশ। মার্কিন কৃষি বিভাগ-ইউএসডিএর প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন তিন কোটি ৬০ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। এতে আমদানি নয় বরং রেকর্ড রপ্তানি করতে পারবে দেশটি।
কৃষিখাতের এমন সুখকর পরিসংখ্যান দিয়েই শুরু হয়েছিল নতুন বছর। মাস পাঁচেক যেতে না যেতেই ভর করে বৈশ্বিক মহামারি করোনার শঙ্কা। এলোমেলো হয়ে যায় সব কিছু।
করোনার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ধাক্কা ভালোভাবে সামলানো গেলেও আসে আরেক দুর্যোগ বন্যা। পর পর পাঁচ দফা বন্যায় চরম শঙ্কায় ফেলে দেয় কৃষিকে।
এতো কিছুর পরও ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে বাড়ানো হয় কৃষির বাজেট। গেলো অর্থবছরের চেয়ে ২৬ দশমিক আট তিন শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় ১৬ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা; যা মোট জিডিপির দুই দশমিক আট নয় শতাংশ।
দেশের খাদ্য চাহিদার বড় অংশজুড়ে মৎস্যখাত। চলতি বাজেটে বাড়ানো হয়েছে তার পরিমাণও। গেলো বছর থেকে ২৬ দশমিক এক ছয় শতাংশ বেশি রেখে এবার করা হয়েছে তিন হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
কৃষিকে টিকিয়ে রাখতে সমান নজর দেওয়া হয়েছে কৃষকের দিকেও। তাই কৃষিঋণের জন্য চার শতাংশ সুদে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
একদিকে করোনা অন্যদিকে বন্যার আশঙ্কা। বছরের প্রায় মাঝামাঝি সময়ে হাওড়ের বোরো ধান কাটতে মৌসুমি শ্রমিকদের যাতায়াতের সুযোগ করে দেওয়া এবং শেষ পর্যন্ত সফলতা নিঃসন্দেহে আত্মবিশ্বাস বাড়ায় সামনে এগিয়ে চলার।
কৃষির এই সাফল্যের পরেও নেতিবাচক প্রভাব পরে পেঁয়াজে। গেলো বছরের পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম অব্যাহত ছিল চলতি বছরেও। যদিও আগের বছরের অভিজ্ঞতা দিয়ে কিছুটা ঠেকানোর চেষ্টা ছিল। তবে, শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
পেঁয়াজের সঙ্গে সবশেষ যোগ হয় আলু। সব রেকর্ড ভেঙে চলতি বছর কেজি প্রতি দামে হাফসেঞ্চুরি করেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যটি। বছরের মাঝামাঝিতে আকাশছোঁয়া দাম বেড়ে যায় আলুর। বছর শেষেও তা মাটিতে নামেনি।
মাস পাঁচেক আগে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট বলেছিল বছর শেষে প্রায় সাড়ে ৫৫ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। সেই হিসেবে বাজারে চালের সংকট থাকবে না। অথচ বছরের মাঝভাগ থেকেই সব ধরনের চালের দাম বাড়তি। এমনকি ভরা আমনের মৌসুমেও চাল আমদানির দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে সরকারকে।
কৃষিবিজ্ঞানীরা বলছেন, অতীতে অনেক বিপর্যয়ে থমকে গিয়েছিল অর্থ যোগানের অন্যান্য উপায়। কেবল থামাতে পারেনি কৃষিকে। তাই নতুন বছরে সব প্রতিবন্ধতাকে ছাপিয়ে কৃষি ও কৃষককে নিরাপদ এবং লাভজনক করার উপায় বের করতে হবে। তবেই, সব সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে।
পি