ব্রাজিল ভক্তদের জন্য গেল বছরটা কিছুটা দুর্ভাগ্যেরই বলা চলে। অবশ্য ২০২২ সালের ডিসেম্বরে কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হারার পর থেকেই অবশ্য তাদের এমন দুরাবস্থা চলছে। কোচ তিতের বিদায়ের পর নতুন বছরেও আসেনি কোনো বড় পরিবর্তন। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘরের মাঠে বাজে পারফরম্যান্স আর নেইমারের বড় ইনজুরি।
বছরের শেষদিকে এসে ফিফার কাছ থেকে নিষেধাজ্ঞার হুমকিও পেয়েছে ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন (সিবিএফ)। দেশটির রিও ডে জেনিরোর এক আদালত ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি এদনালদো রদ্রিগেজকে সরে যাওয়ার আদেশ দেওয়ার পর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে শুরু হয়েছে জটিলতা। এরপরেই কার্লো আনচেলত্তিকে ব্রাজিলের ডাগআউটে দেখা নিয়ে শঙ্কা শুরু হয়। কারণ এদনালদোই আনচেলত্তিকে ব্রাজিলে আনার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন।
এদিকে বর্তমান ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের সাথে চুক্তি নবায়ন করেছেন আনচেলত্তি। স্বাভাবিকভাবেই নতুন বিকল্প খোঁজার দিকে মন দিতে হচ্ছে সিবিএফকে। আর এই তালিকায় আছেন বিশ্বকাপ জেতানো কোচ লুই ফিলিপ স্কোলারির নামটাও। তবে স্কোলারি ছাড়াও নাম আছে আরও কিছু কোচের। যাদের প্রত্যেকেই ব্রাজিলের ঘরোয়া লিগে বেশ পরিচিত মুখ। আর ব্রাজিলের নিজস্ব ধারার খেলার সঙ্গেও বেশ অভ্যস্ত তারা।
১. লুই ফিলিপ স্কোলারি : ব্রাজিলের কোচের দৌড়ে শেষ দুই দিনে বারবার উঠে এসেছে স্কোলারির নাম। ব্রাজিল যে সবশেষ ২০০২ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল, সেটি এসেছিল তার হাত ধরেই। এমনকি ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে তার নেতৃত্বেই ব্রাজিল বিশ্বকাপে খেলতে নেমেছিল। সেবার সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হতে হয় পর্তুগিজ এই মাস্টারমাইন্ডকে।
যদিও শোনা গিয়েছিল, গত ডিসেম্বরেই কোচিং পেশাকে বিদায় জানিয়েছেন স্কলারি। পেশাদার কোচিং কেরিয়ারে ১৮টি ক্লাবের কোচিং করিয়েছিলেন স্কোলারি। পর্তুগাল (২০০৬) ও ব্রাজিলকে (২০১৪) বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে তুলেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপ জিতেছেন একবার। পেশাদার কোচ হিসেবে ১ হাজার ৭০০ ম্যাচে কোচিং করিয়েছেন স্কলারি। জিতেছেন ৮০০টি ম্যাচ। এই কিংবদন্তিকে ব্রাজিলে ফেরাতে হলে তার অবসর ভাঙার ব্যবস্থা করতে হবে সিবিএফকে।
২. আবেল ফেরেইরা : আবেল ফেরেইরার জন্ম পর্তুগালে। খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার শেষে কোচিংয়ে নাম লিখিয়েছেন ১ যুগ আগে। ২০২০ সাল থেকে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে সময় পার করছেন তিনি। ঘরোয়া ফুটবলের বড় ক্লাব পালমেইরাসের কোচের দায়িত্ব এখন তার কাঁধে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৯টি শিরোপা জিতেছেন। এর মধ্যে ২০২০ ও ২০২১ সালে জিতেছেন দক্ষিণ আমেরিকান ক্লাব ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা কোপা লিবার্তোদোরেস।
এ ছাড়া ব্রাজিলিয়ান ঘরোয়া লিগ সিরি আ জিতেছেন দুবার। পালমেইরাসে দুর্দান্ত আবেল ফেরেইরা দেশটিতে বেশ জনপ্রিয়। তাকেই কোচের পদে আগ্রহী বেশিরভাগ ব্রাজিলিয়ান।
৩. হোর্হে জেসুস : ৬৯ বছর বয়সী কোচ হোর্হে জেসুস। ফুটবল নিয়ে ধারণা থাকলে লম্বা চুলের এই কোচকে চেনার কথা। বর্তমানে সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলালের দায়িত্বে আছেন জেসুস। তারই অধীনে খেলছেন নেইমার। ২০১৯ সালে ফ্লামেঙ্গো কোচ হিসেবে ইতিহাস গড়েছিলেন জেসুস। কোপা লিবার্তোদোরেস জয়ের পাশাপাশি ইতিহাস গড়ে ফ্লামেঙ্গোকে জিতিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ।
ব্রাজিলের গণমাধ্যম ‘ও গ্লোবো’ জানিয়েছে, ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (সিবিএফ) জেসুসকে নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় ছিল বরাবরই। এ বছরের জুনে জানা গিয়েছিল, আনচেলত্তি যদি না আসেন, তখন কোচের পদের জন্য অন্য জেসুসকে বিবেচনা করতে পারে সিবিএফ। আল হিলালেও বেশ ভালো করছেন জেসুস।
৪. ফার্নান্দো দিনিজ : ব্রাজিলের স্থায়ী কোচ হিসেবে তাঁর নামটাই উঠে আসছে সবার আগে। ‘ও গ্লোবো’র ভাষায়, জাতীয় দলের স্থায়ী দায়িত্ব নেওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন বর্তমানে অন্তর্বর্তী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা দিনিজ। ফ্লুমিনেন্সের এই কোচ এ বছর কোপা লিবার্তোদোরেস জিতেছেন। খেলার কৌশলে মিল থাকায় তাঁকে ‘ব্রাজিলিয়ান গার্দিওলা’ বলা হয়।
অবশ্য ব্রাজিল জাতীয় দলের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে দিনিজ এখনো বলার মতো সাফল্য পাননি। টানা চার ম্যাচ জয়শূন্য আছেন। শতকরা হিসেবে জয় ৪০ শতাংশের নিচে। তবে ব্রাজিল জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা দিনিজকে পছন্দ করেন। যার কারণে শেষ পর্যন্ত দিনিজই টিকে থাকতে পারেন ব্রাজিলের কোচ হয়ে।