ঢাকাশনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভারতে নারীর চেয়ে বেশি নিরাপদ গরু! (ভিডিও)

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন ২০১৭ , ১২:৫৬ পিএম


loading/img

সম্প্রতি ভারতের নানা জায়গায় গরুর মুখোশ পরা নারীর ছবি দেখা যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব ছবি ছড়িয়ে পড়েছে।  ইন্ডিয়া গেট, কলেজের ক্লাশরুম, ট্রেনের কামরা বা এমনকি রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে নারীর তোলা এসব ছবি দেখা যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এটি কোন সৌখিন ফটোগ্রাফি নয়। এটি ভারতে নারীর প্রতি অবহেলা বা নারী কতটা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে তারই প্রতিচ্ছবি। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের নারীরা প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন গরুর মুখোশ। অভিনব এক প্রতিবাদের মাধ্যম।

২৩ বছর বয়সী ভারতীয় ফটোগ্রাফার সুজাত্র ঘোষ এই ফটোগ্রাফি প্রজেক্ট শুরু করেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, ভারতে এখন গো-রক্ষার নামে যা ঘটছে তা দেখে। তিনি এর মাধ্যমে একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে চেয়েছেন, তা হলো ভারতের মেয়েরা কি গরুর চেয়েও অধম। এখানে নারীর চেয়ে গরু বেশি নিরাপদ। 

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমার দেশে মেয়েদের তুলনায় গরুকে যে এত বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়, সেটা দেখে আমি বিচলিত। এখানে একজন মেয়ে ধর্ষিতা বা লাঞ্ছিত হবার পর বিচার পেতে যে সময় লাগে, তার চেয়ে অনেক দ্রুত বিচার পায় একটি গরু।  কারণ হিন্দুরা এই গরুকে পবিত্র মনে করে।

ভারতে প্রতি পনের মিনিটে একজন নারী ধর্ষিত হয়। এ ধরণের খবরের জন্য প্রায়ই ভারতে সংবাদ শিরোনাম হয়।

সুজাত্র ঘোষ বলেন, এসব অপরাধের মামলা চলতে থাকে বছরের পর বছর। অথচ যখন একটি গরু জবাই করা হয়, তখন হিন্দু চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো গিয়ে তখনই সন্দেহভাজনদের ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলে।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরো বলেন, এই হিন্দু গোরক্ষা গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা এবং তাদের প্রভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবেই এই অভিনব ফটোগ্রাফির ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন।

ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গরু নিয়ে সমাজে তৈরি হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিভেদ।

বিজেপি বলছে, গরু ভারতীয় হিন্দুদের কাছে খুবই পবিত্র এবং এই গরু রক্ষায় তারা নানা ধরণের কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। গরু জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে অনেক রাজ্যে। এখন গো হত্যার জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান করে পার্লামেন্টে একটি আইন পাশ করার কথাও ভাবা হচ্ছে।

কিন্তু ভারতের কোটি কোটি মুসলিম, খ্রীষ্টান এবং  দলিত শ্রেণীর মানুষ গরুর মাংস খান। কাজেই বিজেপির এসব নীতির ফলে তারা এখন নানাভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন।

গেলো দু’ বছরে তথাকথিত হিন্দু গোরক্ষকদের হাতে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র গুজবের ওপর ভিত্তি করে মুসলমানদের ওপর এসব হামলা চালানো হয়। এমনকি গরুর দুধ পরিবহনের জন্য পর্যন্ত মুসলমানদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।

সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে এক সফরের সময় সেখানকার এক পার্টি শপ থেকে কিছু গরুর মুখোশ কেনেন সুজাত্র। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি এই ফটোগ্রাফি সিরিজের জন্য ছবি তুলতে শুরু করেন।

নানা জায়গায় তিনি গরুর মুখোশে নারীর ছবি তুলেছেন। রাস্তায়, আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনের সামনে, ট্রেনে, নৌকায়, ঘরে। নারী যে আসলে ভারতের কোথাও নিরাপদ নয় সেই বার্তা তুলে ধরাই তার লক্ষ্য।

সুজাত্র বলেন, এজন্য অনেকেই আমাকে হুমকি দেয়া শুরু করে। টুইটারে লোকজন আমাকে ট্রল করতে শুরু করে। কেউ কেউ এমন কথাও বলে, আমাকে আর আমার মডেলদের দিল্লির জামে মসজিদে নিয়ে জবাই করা উচিত। ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা প্রচন্ড অপছন্দ করে এমন দুই নারী সাংবাদিক ও আমাকে মাংস খাওয়ানো উচিত। তিনি বলেন, কিছু লোকতো দিল্লি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। তারা বলে আমি নাকি দাঙ্গায় উস্কানি দিচ্ছি। তবে এসব হুমকিতে ভয় পাই না।

এমকে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |