ঢাকাশনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

বুক রিভিউ: অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী

আরটিভি নিউজ

শনিবার, ০৫ মার্চ ২০২২ , ১১:৩৮ এএম


loading/img

জনপ্রিয় লেখক ও ঔপন্যাসিক আহমদ ছফার আত্মজৈবনিক উপন্যাস হচ্ছে ‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী। ব্যক্তিগত জীবনে লেখক অবিবাহিত হলেও কিছু নারীর সঙ্গে তার প্রণয়সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সেইসব সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করেই তিনি এই উপন্যাসের কাহিনি দাঁড় করিয়েছেন। অনেক সাহিত্যিকের মতে, মীর মোশাররফ হোসেন এবং কাজী নজরুল ইসলামের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি মুসলমান লেখক হলেন ছফা।
পুরো উপন্যাসজুড়ে কথক ‘জাহিদ’ তার প্রেয়সীর কাছে অতীত স্মৃতির ভাণ্ডার উন্মোচন করেন। তার প্রেয়সীকে ‘সোহিনী’ নামে সম্বোধন করেন। সোহিনী সম্পর্কে উপন্যাসে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি৷ তবে সোহিনী তার কাছে অর্ধেক আনন্দ অর্ধেক বেদনা, অর্ধেক কষ্ট অর্ধেক সুখ, অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী। তিনি প্রেয়সী সোহিনীর কাছে মূলত দুইজন নারীর কথা বয়ান করেন। প্রথমজনের নাম ‘দুরদানা আফরাসিয়াব’ যে অত্যন্ত দুরন্ত গতিতে জীবন অতিবাহিত করে। নারী হিসেবে তাকে চেনা দায়! অদ্ভুত তার বেশভূষা! নারীত্ব নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যথা নেই। এই অদ্ভুত চরিত্রের নারীর সঙ্গেই একসময় জাহিদের সুপ্ত প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দুরদানার দ্বিচক্রযানের পেছনে চড়ে জাহিদ সারাদিন ঘুরে বেড়ায়। পাশাপাশি অনেকেরই চক্ষুশূল হয়ে উঠে সে। একটা সময় হঠাৎ জাহিদের সামনে দুরদানার নারীত্ব প্রকাশ পেলে তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ে সে। দুরদানার ভাই, যিনি রাজনৈতিক নেতা, ইউসুফ জোয়ারদার খুন হয়। ধীরে ধীরে দুজন বিপরীতদিকে চলে যায়।
এরপর জাহিদের জীবনে আসে ‘শামারোখ’। সদ্য স্বামী-সন্তান ছেড়ে আসা অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারিণী শামারোখ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকুরীটি পেয়েও হারাতে বসেছেন বিভাগীয় প্রধানের চক্রান্তের শিকার হয়ে। বিচিত্রসব কাহিনীর মধ্য দিয়ে এই জীবন্ত সৌন্দর্যের প্রতীক শামারোখের সাথে জড়িয়ে যায় জাহিদ। নিজের নারীত্ব আর অসাধারণ সৌন্দর্য দিয়ে যেনো পৃথিবী জয় করতে চায় সে। অল্প কিছুদিনের পথ চলায় জাহিদ এই নারীর বিচিত্র সব রূপ প্রত্যক্ষ করেছিলো, কিন্তু তার সৌন্দর্য্যের আকর্ষণ উপেক্ষা করতে পারেনি সে। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও যথাসাধ্য সাহায্য করেছিলো শামারোখকে। কিন্তু একটা সময় এই শামারোখ যুক্তরাষ্ট্র ফেরত কবি শাহরিয়ারের মধ্যে সুখ খুঁজে নেয়। তবে এখানেই দুরদানা ও শামারোখের পরিণতি সমাপ্ত নয়। পরিপূর্ণ উপলব্ধিকরণে পড়তে হবে বইটি।
কিছু রূপক নামের আড়ালে লিখা এই প্রেমকাহিনী শুরুর দিকে চরম মাত্রার বিভ্রান্তি সৃষ্টি করলেও ধীরে ধীরে তাতে আকর্ষণ খুঁজে পাওয়া যায়। তবে বইটি পড়ে আরাম পাইনি। কিছু জায়গায় বিরক্তি জন্ম নিয়েছিলো। কাহিনীর পাশাপাশি প্রচুর জিজ্ঞাসা ও উৎকণ্ঠা নিয়ে চলতে হয়েছে। তবে যুদ্ধ পরবর্তী ঢাকার স্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠেছে বইতে। আর আহমদ ছফার কিছু মতবাদ ও উক্তি সত্যিই মনে রাখার মতো ছিলো।
‘নারী আসলে যা, তার বদলে যখন সে অন্যকিছুর প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়, তখন তার আকর্ষণ করার শক্তি হাজার গুণ বেড়ে যায়।’ ‘মনস্তত্ত্বের কারবারিরা নিজেরাই মানসিক রোগী। তাদের সঙ্গে বেশি ঘাটাপিটা করলে অন্যকেও তারা রোগীতে পরিণত না করে ছাড়ে না।’ ‘একজন তরুণ কবি রসিকতা করে বলেছিলেন ঢাকা শহরের কাকের সংখ্যা যতো, কবির সংখ্যা তার চাইতে কম হবে না।’
লেখক: মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার , গণমাধ্যমকর্মী

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |