বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে রাহাত খানের দাফন আজ (ভিডিও)
আজ শনিবার বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাহাত খানকে রাজধানীর মিরপুরে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে। রাহাত খানের স্ত্রী অপর্ণা খান এ তথ্য জানান।
এর আগে শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে মারা যান রাহাত খান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
রাহাত খানের স্ত্রী অপর্ণা খান রাত সোয়া ৯টার দিকে নিজের ফেসবুক পেজে রাহাত খানের মৃত্যুর খবরটি সেসময় জানান।
করোনাকাল হওয়ায় বাসাতে রেখেই দেশের জনপ্রিয় কথাশিল্পী ও গুণী এই সাংবাদিকের চিকিৎসা চলছিল বলে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়।
গত ২০ জুলাই রাহাত খানকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার আগের দিন বাসায় খাট থেকে নামতে গিয়ে কোমরে ব্যথা পান। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে এক্স-রে করা হলে পাঁজরে গভীর ক্ষত ধরা পড়ে। এর পাশাপাশি তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে তাকে বারডেম হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি করা হয়।
রাহাত খান বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান কথাশিল্পী। ছোটগল্প ও উপন্যাস উভয় শাখাতেই তার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। সাংবাদিক হিসেবেও রাহাত খান স্বনামখ্যাত। ষাটের দশক থেকে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় কর্মরত থেকে দীর্ঘদিন সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন। বিখ্যাত সিরিজ মাসুদ রানার রাহাত খান চরিত্রটি তার অনুসরণেই তৈরি করা। কথাসাহিত্যিক হিসেবে সমাদৃত হলেও কর্মসূত্রে রাহাত খান আপাদমস্তক ছিলেন সাংবাদিক।
রাহাত খানের জন্ম ১৯৪০ সালের ১৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার পূর্ব জাওয়ার গ্রামের খান পরিবারে। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষা জীবন শেষ করে রাহাত খান কিছুদিন জুট পারচেজ ও বীমা কোম্পানিতে চাকরি করে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে যোগদান করেন।তারপর একে একে জগন্নাথ কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনা করেছেন।
১৯৬৯ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় তার সাংবাদিকতা জীবনের হাতেখড়ি। পরে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদান করেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালে তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় দৈনিক বর্তমান পত্রিকা। আমৃত্যু তিনি দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘অনিশ্চিত লোকালয়’ প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে। তার পরবর্তী উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘অমল ধবল চাকরি’, ‘ছায়াদম্পতি’, ‘শহর’, ‘হে শূন্যতা’, ‘হে অনন্তের পাখি’, ‘মধ্য মাঠের খেলোয়াড়’, ‘এক প্রিয়দর্শিনী’, ‘মন্ত্রিসভার পতন’, ‘দুই নারী’, ‘কোলাহল’ ইত্যাদি।
একুশে পদক ছাড়াও তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৩), সুহৃদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৫), সুফী মোতাহার হোসেন পুরস্কার (১৯৭৯), আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮০), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮২), ত্রয়ী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮) পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক রাহাত খান আর নেই
এসএস
মন্তব্য করুন