দুই মাসেও উদ্ঘাটন হয়নি এমপি আনার হত্যার রহস্য
ঝিনাইদহ-৪ আসনের ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। ভারতের কলকাতায় খুন হওয়া এমপি আনার হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে ঢাকা-দিল্লি একসঙ্গে কাজ করলেও মরদেহ উদ্ধার না হওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রমাণ হয়নি খুনের বিষয়টি।
গত ২২ মে কলকাতায় সাঞ্জিভা গার্ডেন্সে ভারতের সিআইডি এমপি আনারকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে। এরপর ২৮ মে ওই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে চার কেজির মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাংস ও হাড়ের গুঁড়ো এবং চুল উদ্ধার হওয়ার একটা ভিডিও ক্লিপ গণমাধ্যমের সামনে আনা হয়। মাংস উদ্ধারের কথা সিআইডি-ডিবি আনুষ্ঠানিকভাবে জানালেও ওই মাংস যে এমপি আনারেরর, সেটা ফরেনসিক না হওয়ায় নিশ্চিত করা যায়নি।
কলকাতায় উদ্ধার হওয়া লাশের খণ্ডিত অংশের সঙ্গে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য এখনও নমুনা নেওয়া হয়নি এমপি আনারের মেয়ে ডরিনের। পরিবারের সদস্যদের কলকাতায় ডাকা হলেও নানা জটিলতায় এখনও যেতে পারেননি তারা।
এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ১০ জনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে ডিবির তদন্ত দল। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে বাংলাদেশ ও দুজনকে ভারতের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বাকি তিনজন এখনো অধরা রয়েছেন। এর মধ্যে হত্যার ‘মূল মাস্টারমাইন্ড’ আক্তারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। তাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশনের (ইন্টারপোল) সহায়তা চেয়ে ইতোমধ্যে লিখিত আবেদনও করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দাদের দাবি, ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক বিরোধের জেরেই খুন হয়েছেন এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে, স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে দ্বন্দ্ব ও স্থানীয় রাজনৈতিক কোন্দল। তবে বাস্তবতা হলো, এখনও তদন্ত প্রতিবেদন দেয়নি পুলিশ।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ বলেন, বাংলাদেশের ডিবির পার্ট নয় এটি (ডিএনএ নেওয়া)। মামলাটি যেহেতু ভারতের সিআইডিতে আছে, তারা ডেকেছে; শিগগিরই ডিএনএ দিতে যাবে হয়তো। সবকিছু মিলিয়েই আমরা তদন্ত করছি। ভারতের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনোয়ারুল আজিম। তিনি পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন আনোয়ারুল আজিম। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পাঁচদিন পর গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজিমের নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপর এমপি আনারের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে কলকাতা পুলিশ। কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে হত্যা করা হয়েছে বলে গত ২২ মে জানায় ভারতীয় পুলিশ। তারপর থেকে বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ও ভারত থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে দুই দেশের পুলিশ।
মন্তব্য করুন