অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, যাদের সঙ্গে যে ধরনের চুক্তি বা কমিটমেন্ট আছে সেগুলো অবশ্যই আমাদের রক্ষা করতে হবে। শেখ হাসিনা ভারতে থাকলেও ওই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্টের কোনো কারণ নেই।
সোমবার (১২ আগস্ট) বিকেলে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা ভারতে থাকা নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন হবে কি না, জানতে চাইলে উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনেক বড় বিষয়, এটা স্বার্থের সম্পর্ক। বন্ধুত্ব স্বার্থের জন্য। বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থ আছে, আবার ভারতে আমাদের স্বার্থ আছে। আমরা সেই স্বার্থকে ফলো করব এবং আমাদের সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করব। তিনি (শেখ হাসিনা) সেখানে থাকলে বা কেউ কোনো দেশে থাকলে সেই দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হবে কেন, নষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই।
নিজেদের দায়িত্বের বিষয়ে বলতে গিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ক্ষমতা’ শব্দ ব্যবহার করতে চাই না। যেই কাউন্সিল এখন দায়িত্বে আছে, সেটা পালন করে সরে যাব। আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি এই কাউন্সিল অন্য কারও জন্য কাজ করছে না, শুধু বাংলাদেশের জন্য কাজ করছে। আমার নিজের ব্যাপারে তো আমি নিশ্চয়তা দিতে পারিই, বাকিদের যা দেখেছি তাতে কেউই অন্য কোনো দেশের জন্য কাজ করছে না বলে আশ্বস্ত করেন সাংবাদিকদের।
ভারতের মিডিয়া গুলোর প্রোপাগান্ডার কাউন্টার দেওয়া হবে উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, সমাজের যারা রিপ্রেজেন্টেটিভ তাদের কাছ থেকে আমরা কাউন্টার প্রত্যাশা করি। আপনারা যা দেখছেন সেটা প্রচার করুন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গে এই উপদেষ্টা বলেন, বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে স্পষ্ট করেছি যে, এই সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া। এ নিয়ে কোনো সন্দেহের সুযোগ নেই। এখন যে সিচুয়েশন তাতে দেশটাকে লাইনে নিয়ে আসতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করা দরকার এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করতে আগামী এক মাস কাজ করতে হবে। অপরদিকে যারা এ পরিবর্তন এনেছে তাদের কিছু পয়েন্ট আছে। এতগুলো জীবন তারা দিয়েছে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য নয়। কাজেই কিছু রিফর্মের প্রয়োজন হবে। সেই রিফর্মের প্রয়োজনে ঠিক যেটুকু সময় থাকা দরকার, ততটুকু সময়ই থাকব, বেশিও থাকব না কমও থাকব না। যেটুকু সময় প্রয়োজন, সেটুকুই থাকব। ইয়াং জেনারেশনের মৌলিক দাবিগুলো পূরণ করে দিতে হবে। তবে আমরা সময়ের বিষয়ে কিছু বলছি না।
ইউরোপ-আমেরিকা-চীন-ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, যাদের সঙ্গে যে ধরনের চুক্তি বা কমিটমেন্ট আছে সেগুলো অবশ্যই আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমরা চেষ্টা করব আমাদের স্বার্থ যেন সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যায়। যেখানে আমাদের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়েছে, সেখানে আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব, এমন নয় যে থেমে আছি।
এর আগে দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
এ বৈঠকে যোগ দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপান, ভারত, জার্মান, ব্রিটিশ, কানাডা, রাশিয়া, ইইউ, স্পেন, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড, চীনসহ অন্তত ৬০টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা।