ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত জেলাগুলোর সর্বশেষ চিত্র
ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজানের ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লাসহ দেশের আটটি জেলা। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙনস্থল দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করতে থাকায় তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক জনপদ। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর সব সড়ক ও ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বন্যাদুর্গত আটটি জেলা হলো ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। আকস্মিক বন্যায় দেশের এ ৮ জেলার মোট ৩৫৭টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৪০টি পরিবার। মোট ক্ষতিগ্রস্ত ২৯ লাখ ৪ হাজার ৯৬৪ মানুষ।
ফেনী
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফেনী জেলার ৬টি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত। পানিবন্দি ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। বন্যার পানিতে ডুবে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ২০ হাজার মানুষ। ৭৬টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে নগদ ৪২ লাখ এবং ত্রাণ কার্য (চাল) ১ হাজার ৪০০ টন ও শুকনা খাবার ৩ হাজার প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লা
সবশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কুমিল্লাতে ১২টি উপজেলার ১২৪টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৬৬১টি পরিবার। চরম দুর্যোগের মুখোমুখি ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ মানুষ। ৫৮৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারী লোকসংখ্যা ৪ হাজার ৩০২ জন এবং গবাদিপশুর সংখ্যা ৬৬৭টি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নগদ ২৫ লাখ টাকা এবং ১ হাজার ৬০০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এখন পর্যন্ত ২টি উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১২শ’ পরিবারের ৪ হাজার ৯৯১ জন। একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। জেলার ১১টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত আশ্রয় গ্রহণ করেছে ৪৮ জন। মেডিকেল টিম চালু আছে ৬টি। এ ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নগদ ১৫ লাখ টাকা এবং ১ হাজার ৬০০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
নোয়াখালী
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, নোয়াখালীতে এখন পর্যন্ত ৮টি উপজেলার ৮৬টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চলতি বন্যায়। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯০০ পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত মোট লোকসংখ্যা ১৯ লাখ ৮০ হাজার জন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলাজুড়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৩৮৮টি৷ তাতে এখন পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছেন ৩৬ হাজার ১১৫ মানুষ। ৮৮টি মেডিকেল টিম চালু হয়েছে বন্যা দুর্গতদের সেবায়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নগদ ২৫ লাখ টাকা এবং ১ হাজার ৬০০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম
বন্যায় চট্টগ্রাম জেলার ৩টি উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩৫ হাজার ৭৫০ পরিবার এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ মানুষ। ২৩৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে জেলা জুড়ে৷ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে এখন পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছেন ১ হাজার ৭২৫ জন মানুষ। এ ছাড়া বন্যার্তদের সেবায় চালু করা হয়েছে ১৩৭টি মেডিকেল টিম। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে নগদ ১৫ লাখ টাকা এবং ১ লাখ ৬০০ টন চাল।
মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজার জেলার ৬টি উপজেলার ৩৭টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এখন পর্যন্ত। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২২ হাজার ৫৭৭ পরিবার এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লাখ ১২ হাজার ৬৬৭ মানুষ। মোট ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে জেলা জুড়ে। সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন ৪ হাজার ৩২৫ জন। এই মুহূর্তে সেখানে মেডিকেল টিম চালু আছে ৩১টি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে নগদ ১০ লাখ টাকা এবং ১ হাজার ৮৫০ টন চাল ও ১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার।
খাগড়াছড়ি
এখন পর্যন্ত বন্যায় খাগড়াছড়ি জেলার ৮টি উপজেলার ২৭টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩৩ হাজার ৫২২ পরিবার এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৭১ জন। ৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এ জেলায়। কেন্দ্রগুলোতে এখন পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছেন ৯ হাজার ১৩ জন। ১৮টি মেডিকেল টিম চালু আছে বন্যার্তদের সেবায়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৮০০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ত্রাণ হিসেবে।
হবিগঞ্জ
বন্যায় হবিগঞ্জের ৫টি উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এখন পর্যন্ত। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সেখানকার ৮ হাজার ২৪০ জন মানুষ। জেলাজুড়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১১৬টি। তবে এখন পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছেন ১৪০ জন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে নগদ ২৫ লাখ টাকা এবং ১ হাজার ৯০০ টন চাল ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন