যে প্রক্রিয়ায় পদত্যাগপত্র জমা দিচ্ছেন প্রতিমন্ত্রী মুরাদ
যৌন হয়রানিমূলক, বিকৃত, বর্ণবাদী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী নেত্রীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান। পাশাপাশি নায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে অশ্লীল আহ্বানের কল রেকর্ড ফাঁসের পর চারদিকে যখন সমালোচনার ঝড় উঠলে আজ মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার মাধ্যমে অথবা ইমেইলে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কথা রয়েছে তার। তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে।
-
আরও পড়ুন... তথ্য প্রতিমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নেওয়া কে সেই যুবক?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই তিনি পদত্যাগ করছেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। সোমবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বেশ কয়েক দিন ধরেই বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে আলোচনায়-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ডা. মুরাদ হাসান। বিশেষ করে রাষ্ট্রধর্ম, রাজনীতি, খালেদা জিয়ার নাতনি ও সবশেষ ফোনালাপ ফাসঁ নিয়ে ভেতর-বাইরে আলোচনা-সমালোচনায় ছিলেন তিনি। তার উল্টাপাল্টা মন্তব্য এবং অস্বাভাবিক আচরণের কারণে দলীয় সহকর্মীদেরও বিব্রত হতে হয়েছে।
-
আরও পড়ুন... ডা. মুরাদ ঢাকা ছেড়ে গেলেন কোথায়?
এসব কারণে গতকাল সোমবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডা. মুরাদের অ্যাগ্রেসিভ বক্তব্যে সবাই খুব বিরক্ত হলেও এতদিন আলোচনায় ছিলেন না তেমন। সবশেষ রাষ্ট্রধর্ম ও ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়া নিয়ে বক্তব্য দিয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। গত অক্টোবরে প্রথম রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরোধিতা করে আলোচনায় আসেন মুরাদ হাসান। সেসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোনো ধর্ম ব্যবসায়ী, মৌলবাদীদের আস্তানা হতে পারে না। যেকোনো মূল্যে ’৭২ এর সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এর আগে সদ্য বরখাস্ত হওয়া গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীরের ২২ লাখ টাকা মূল্যের মোটরসাইকেলে হেলমেট ছাড়া ঘুরে বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন।
সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান ও নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি।
প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে হাস্যরস করতে করতে ওই নারীকে নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়েও ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করতে শোনা যায় তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে।
এরপর থেকে নারীবাদী সংগঠন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে এমপি মুরাদের শাস্তির দাবি ওঠে। কয়েকটি নারী সংগঠন বিবৃতিও দিয়েছে এ বিষয়ে। এ ছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
এদিকে গত শনিবার একটি টিভি টকশোতে উপস্থিত বিএনপির একজন সাবেক নারী এমপিকে ‘মানসিক রোগী’ বলে অভিহিত করে তার সঙ্গে বিতণ্ডায় লিপ্ত হন তিনি।
এদিকে এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে মুরাদ হাসানের আপত্তিকর ফোনালাপ ফাঁস হয়। মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় এটি।
মুরাদ হাসান পেশায় চিকিৎসক ও আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে প্রথমে মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালের মে মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কেএফ/টিআই
মন্তব্য করুন