ঢাকাশনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

পেশায় তারা ভূতওয়ালা!

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন

বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর ২০১৬ , ০৫:৫৭ পিএম


loading/img

এই পৃথিবীতে কত রকমেরই না মানুষ, তাদের পেশাও ভিন্ন ভিন্ন। যেমন ধরেন- ভূতওয়ালা। হ্যাঁ আপনি সত্যিই শুনছেন। ভূতই তাদের রুটি, রুজি। ভূত নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ান তারা! গ্রামের ছেলে-বুড়ো সবাই ‍ভূতওয়ালা বলেই তাদের জানে।

বিজ্ঞাপন

বিষয়টি জানতে পেরে আমারও আগ্রহ জন্মায়। বেরিয়ে পড়ি ভূত দেখতে। সারারাত ট্রেন জার্নি করে যখন আমরা পৌঁছলাম ভূতওয়ালাদের গ্রামে, তখন বেলা শুরু। বছরে এ সময় তাদের কাজের চাপ কিছুটা কম থাকে। তবে চৈত্র মাসে চাপ খুব বেশি। ওই সময় ভূতওয়ালাদের ঘুমও নাকি হারাম।

তবে আজ ভূতওয়ালাদের বিন্দুমাত্র সময় নেই আমাদের সঙ্গে কথা বলার। গেলো রাতে উত্তরপাড়া থেকে ডাক এসেছিল। সন্ধ্যার আগে আগে যেতে হবে আরো ৩ বাড়ি। সারারাত উত্তরপাড়ায় ভূত নিয়ে কাজ করতে হবে।  

বিজ্ঞাপন

এ বাড়ি ওই বাড়ি সবার ডাকাডাকি- ও ভূতওয়ালা আমাদের বাড়ি এসো তোমার ভূত নিয়ে। ভূতের কদর, ভূতওয়ালার কদর, সঙ্গে আমাদেরও কদর কম নয়। আমরা যে মেহমান। তাই হাজার ব্যস্ততার মধ্যে বাড়ির লোকজন আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। আমরা তাদের কাজের ব্যাঘাত না ঘটিয়ে চলে এলাম। অবসরে দেখা হবে। কথা হলে আড্ডা। শহরবাসীও জানবে কে ভূতওয়ালা। কী ভূত তারা পোষেণ।

এ কেমন পেশা?
মাসখানিক পর আমরা ফের ভূতওয়ালাদের গ্রামে। তিনজন ভূতওয়ালা। ও ভূতওয়ালা, একটু সময় হবে ভাই? -না সময় নেই। আমাদের নাওয়া-খাওয়ারও সময় নেই। কিন্তু আমিও ছাড়ার পাত্র নই। তাদরে সঙ্গে কথা বলার জন্য আমিও তিনজনের দলে যোগ দিলাম। হয়ে গেলাম সারাদিনের জন্য দিনমজুর। খাওয়া ফ্রি। তবে কোনো টাকা মিলবে না।

পাবনার বিভিন্ন গ্রামে ভূত ও ভূতওয়ালাদের দেখা মিলবে। তারা গ্রামে গ্রামে ছুটে চলেন ভূত নিয়ে। আসলে ভূত এক ধরনের মটরচালিত মাড়াই যন্ত্র। ধান, গম, ভুট্টা, তিল, তিশি, মাসকলাই, সরিষাসহ নানা ফসল মাড়াই করা হয় এ যন্ত্রে। মেশিনের একদিকে পুরো কাণ্ডসহ বিভিন্ন ফসল ডুকিয়ে দেয়া হয়, অন্যদিক দিয়ে শষ্য ও উচ্ছিষ্ট আলাদা বের হয়।
 

বিজ্ঞাপন

যারা এ মেশিন চালায় তারা ভূতওয়ালা। তাদের নিয়ে গ্রামে নানা কথা প্রচলিত আছে এখনও। বলা হয়, ভূতওয়ালাদের পেট নাকি ভূতের মতো। আস্ত গরু খেয়ে ফেলতে পারে তারা! ধান, সরিষা, ভুট্টা, তিল, তিশি, মাসকলাই- যাই মাড়াই করা হোক ভূতওয়ালাকে প্রতি মণে ৩ কেজি দিতে হয়। সঙ্গে সারাদিনের খাবার, পান, চা-বিড়ি তো আছেই।

বিজ্ঞাপন

উত্তরপাড়া যাবার আগেই আমি ক্লান্ত দেহ নিয়ে চলে এলাম। সারা শরীরে মাসকলাইয়ের গন্ধ। ভূতের মালিক সামছু আমাকে এগিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন। চলতে চলতে বললেন, ‘ভাই ভূত মেশিন ভালো না। অনেক মানুষ বেকার হইয়া গেছে। ১০ জনের কাজ একাই করা যায়। এতগুলা মানুষের রুটি-রুজি শেষ কইরা দিল।’

বিদায় দেয়ার আগে তিনি বললেন, ‘আইলেন আর যাইবেন। একদিন থাইক্কা যান ভাই। তিলের পিঠা বানাবে আপনার ভাবি। কিছুই তো খাওয়া হইলো না। একদিন বেশি থাকলে থাকলে সমস্যা কী?’ একদিনের সম্পর্কেই তার চোখে পানি।

আসার আগে সবাই আমাকে নবান্নের আমন্ত্রণ জানালো। আর মাসখানেক পর শুরু হবে তাদের নবান্ন উৎসব। তবে ব্যানার, পোস্টার, পত্রিকার পাতায় কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের স্বাদ-গন্ধহীন শহুরে নবান্ন উৎসব নয়। এ গ্রামে নবান্ন মানে দলে দলে গ্রামের মেয়েরা বাড়ি আসবে, সঙ্গে শিশুরা। জামাইদের জন্য বানানো হয় শত পদের পিঠা।

আমি সন্ধ্যার ট্রেনে ঢাকায় ফিরছি। সারা আকাশজুড়ে আজ যেন চাঁদের রাজত্ব। আজব এক চাঁদ। আমার ঢাকায় ফিরতে ইচ্ছে করছে না। জয়দেবপুর নেমে গেলেই ভালো হয়। ঢাকার আকাশে চাঁদ ভালো লাগে না। ব্যস্ত শহরের আকাশে ধূলার স্তর অনেক বেশি। তাই চাঁদের রূপ ভালোভাবে উপভোগ করা যায় না।

এইচএম/ এস

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |