ভালবাসার দান ডাস্টবিনে

জয়নুল আবেদীন, চট্টগ্রাম

সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ , ১২:৫০ পিএম


ভালবাসার দান ডাস্টবিনে

নকিব খান গেয়েছেন, 'আজ যে শিশু পৃথিবীর আলোয় এসেছে, আমরা তার তরে একটি সাজানো বাগান চাই'। সম্প্রতি চট্টগ্রামে ডাস্টবিনে ৩ নবজাতক শিশু কুঁড়িয়ে পাবার ঘটনায় এ গানের কথাগুলো বড় অসহায় শোনায়। ৩ শিশুর দু'জন পৃথিবীর অপরূপ শোভা উপভোগ করার সুযোগ না পেলেও এক শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে কলেজ ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এখন বেশ ভালই আছে 'একুশ' নামকরণ হওয়া শিশুটি। নিষ্ঠুর পৃথিবীতে ভাগ্যবানই বলতে হবে তাকে।

বিজ্ঞাপন

২০ ফেব্রুয়ারি রাত বারোটার দিকে নগরীর কর্নেল হাট এলাকায় লাইফকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পাশে ডাস্টবিনে শিশু কান্নার শব্দ শুনতে পান স্থানীয় কিছু যুবক। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশের সহযোগিতায় ভর্তি করা হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যালে। সপ্তাহখানকের চিকিৎসায় সুস্থ হয় শিশুটি। একুশের প্রথম প্রহরে কুঁড়িয়ে পাওয়ায় তার নামকরণ হয় একুশ। স্বজনদের উষ্ণ ভালবাসা না পেলেও অসংখ্য ভালবাসার হাত এখন তার দিকে। নিজ মায়ের বুক না পেলেও অনেক সহৃদয়বান মা তাকে বুকে টেনে নিতে চাচ্ছেন।

এদিকে, ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব রোডের ডাস্টবিনে পাওয়া যায় আরো দু'নবজাতকের মৃতদেহ। শিশু দুটি দেখে হতভম্ব হয়ে যায় পথচারীরা। নির্বাক হয়ে পড়ে কৌতূহলী মানুষ। পরে স্থানীয়রা মৃত জোড়াশিশু দাফনও করেন নিজ দায়িত্বে। এরই সঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ হয়, মানবতা নামের ৪ বর্ণের শব্দটিও। সামনে আসে আরো অনেক প্রশ্ন। কেনো ফুলের মতো নিষ্পাপ ও নবজাতকদের এভাবে ডাস্টবিনের পড়ে থাকতে হয়? কারা অসভ্য বর্বরের মতো এমন কাজ করেন?

বিজ্ঞাপন

এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদারের সঙ্গে। তিনি আরটিভি অনলাইনকে বললেন, মানবশিশু হত্যার ঘটনা নিষ্ঠুরতার প্রতীক। এ ঘটনা অমানবিক সমাজ ব্যবস্থারই অংশ। তার মতে, আকাশ সংস্কৃতির ফিল্টারবিহীন প্রচার প্রচারণায় সমাজের এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা মানুষকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করায় মানবিক মূল্যবোধ কমে গেছে। অভিভাবকেরা বিত্তবৈভবের পেছনে ছুটতে গিয়ে সন্তানদের মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে নৈতিকতার সংকট। যৌথ পরিবারগুলো ভেঙ্গে যাওয়ায় ভালবাসা আর মায়া মমতার ঘাটতি কমে আসছে।

পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মেজবাহ উদ্দীন চৌধুরী আরটিভি অনলাইনকে বললেন, অনিরাপদ ও অবৈধ যৌন মিলনের কারণে অযাচিত সন্তানের জন্ম হয়। সমাজে পারিবারিক ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রাখতেই অযাচিত মানবশিশুর হত্যা সংঘটিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সন্তানদের সঙ্গে পিতামাতার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা জরুরি। বয়:সন্ধিক্ষণে সন্তান-সন্ততির সঙ্গে পিতামাতাকে খোলামেলা আলাপ আলোচনা করা দরকার। মা-বাবা বা নারী শিক্ষকের সহায়তায় মেয়েদেরকে সচেতন করা এখন সময়ের দাবি।

তিনি আরো বলেন, নবজাতকদের রাস্তায় বা ডাস্টবিনে ফেলে দেয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে ৩০৪ ধারায় যাবজ্জীবন এবং মানবশিশু হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে ৩০২ ধারায় সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে পিতা-মাতা সনাক্ত করা সম্ভব হয় না। সব শিশুরই বাঁচার অধিকার আছে। এসব শিশুর দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। প্রয়োজনে দেশের প্রতিটি থানায় 'শিশু নিকেতন' গড়ে তুলে এদের বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এসজে/এসএস

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission