ঢাকাশনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এসব হাওয়াই মিঠাইয়ে জড়িয়ে আছে শামীমের ভালোবাসা

কুড়িগ্রাম (উত্তর) প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

রোববার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ০৩:২০ পিএম


loading/img
হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে সংসার চালান পিতৃহীন শামীম!

চালকের সমান উচ্চতার বাইসাইকেলটি ছুটে চলছে পাকা সড়ক ধরে। হাওয়ায় এদিক-সেদিক উড়ছে সাইকেলের হাতলে বাঁধা পলিথিনের ঠোঙায় মোড়ানো মেজেন্টা রংয়ের হাওয়াই মিঠাই। সবমিলিয়ে পঞ্চাশটা হাওয়াই মিঠাই। এসব হাওয়াই মিঠাইয়ে জড়িয়ে আছে চালক শামীমের ভালোবাসা এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পেট পুড়ে খাওয়ার স্বপ্ন।

বিজ্ঞাপন

ভালোবাসা দিবসে নিজের ভালোবাসা প্রাপ্তির কথা ভুলে পরিবারে অন্য সদস্যদের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে পাড়ায় পাড়ায় ছুটে চলেছে ৯ বছরের শিশু শামীম। শামীমের বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভেরখাস ইউনিয়নের চর টুপামারী গ্রামে। চর টুপামারী দুধকুমার নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন।

আরও পড়ুন : অন্যান্য দেশ থেকেও ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা হবে: প্রধানমন্ত্রী (ভিডিও)

শামীম জানায়, তার বাবা মাহাবুর তিন বছর আগে মারা গেছে। মা ছামিনা বেগম তার (শামীমের) নানার বাড়িতে সারাদিন ছাগল ও গরু চড়িয়ে সামান্য উপার্জন করে। যা দিয়ে চার সদস্যদের মুখে ভাত তুলে দেয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সেই বড়। ফলে সংসারের অন্য সদস্যদের খাবার এবং ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিতে মাঠে নামতে হয়েছে শিশু শামিমকে। হাওয়াই মিঠাই বিক্রির কম পুঁজির ব্যবসা ধরতে হয় তাকে। কাক ডাকা ভোরে বাড়ি থেকে একটি নদী পাড় হয়ে নাগেশ্বরীর ওয়াপদা বাজারে যেতে হয় তাকে। সেখান থেকে ১৫০ টাকা পুঁজিতে ৫০টি হাওয়াই মিঠাই কিনে ফিরতি পথে বিক্রি করতে করতে বাড়িতে আসে সে।

সকালের নাস্তা বাড়িতে সেরে আবার একটি নদী পার হয়ে বল্লভেরখাস ইউনিয়নের মাদারগঞ্জ, গাবতলা, কেদার ইউনিয়নের কচাকাটা, সুবলপাড়, বলদিয়া ইউনিয়নের সাদুর মোড় পর্যন্ত যেতে হয় তাকে। সব মিলিয়ে ৩০ কিলোমিটার বাইসাইকেল চালিয়ে হাওয়াই মিঠাই বেচা-কেনা করে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায় তার। সাইকেল চালিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে কখনো হাঁক-ডাক ছেড়ে আবার কখনও ঘণ্টি বাজিয়ে ছেলে-মেয়েদের দৃষ্টি কাড়ে সে। সারাদিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আয় হয়।

আরও পড়ুন : ভালোবাসা সম্পর্কে ইসলাম যা বলে

শামীম আরও জানায়, ছোট ভাই এবং সংসারের হাল ধরতে তাকে এ ব্যবসায় নামতে হয়েছে। হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে অনেক সময় অভিভাবকদের রোষানলে পড়তে হয়। ঘণ্টির শব্দে ছেলে-মেয়েরা বাড়ি থেকে তার কাছে ছুটে আসে। এসময় হাওয়াই মিঠাই কিনে দিতে তারা বাবা-মায়ের কাছে বায়না ধরে। অনেক বাবা-মা কিনে দেন। আবার অনেক বাবা-মা আমাকে গালি দেন এবং সরে যেতে বলেন। তারপরেও পেট চালাতে আমাকে এই ব্যবসা করতে হয়। এবার তৃতীয় শ্রেণি পাস করে চতুর্থ শ্রেণিতে ওঠার কথা ছিল কিন্তু করোনাভাইরাসের জন্য তা হয়ে ওঠেনি। সুযোগ পেলে লেখাপড়া করার আগ্রহ রয়েছে বলেও জানায় শামীম।

আরও পড়ুন : ক্ষুধা, তৃষ্ণায় মরুভূমিতে এক পরিবারের ৮ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু

বল্লভেরখাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকমল হোসেন জানান, শামীমের পরিবারটি অত্যন্ত দরিদ্র। তাকে এত ছোট বয়সে পরিবারের ভার নিজের কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি পরিবারটিকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং সচেতন ও হৃদয়বান মানুষদের শামীমের পাশে এসে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
এসআর/পি

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |