রসমলাই মানেই কুমিল্লার পুরাতন মাতৃভান্ডার। প্রতিষ্ঠানটির খ্যাতি দেশজুড়ে। নগরীর মনোহরপুর এলাকায় অবস্থিত মাতৃভান্ডার প্রতিদিন অসংখ্য ক্রেতা ভিড় করেন।
কিন্তু সেই খ্যাতি কাজে লাগিয়ে প্রতারণা করছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। মাতৃভান্ডারের নামের আগে পিছে বিশেষণ লাগিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ, বুড়িচং, চান্দিনা এলাকায় গড়ে তুলেছে প্রায় শতাধিক মাতৃভান্ডার।
অভিযোগ রয়েছে, এসব মাতৃভান্ডার থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ রসমলাই কিনে প্রতারিত হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে প্রশাসন একেবারেই নিরব রয়েছে।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, উনিশ শতকের গোড়ার দিকে চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে এক হিন্দু ব্যবসায়ী এসে কুমিল্লার মনোহরপুর এলাকায় রাজ রাজেশ্বরী কালী বাড়ির সামনে প্রথম প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেন। এরপর একসময় এ কালীবাড়ির সামনেই গড়ে তোলেন মাতৃভান্ডার নামের প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রতিষ্ঠানটির কোথাও কোনো শাখা নেই।
এখানে রসমলাই কিনতে প্রতিদিন অসংখ্য ক্রেতা আসেন। দোকান মালিক পক্ষ মিষ্টি বিক্রির বিষয়ে কোনো তথ্য না দিলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দায়িত্বশীল সুত্র মতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩/৪ হাজার কেজি রসমলাই সারা দেশে বিক্রি হয়। প্রতিদিন বহু মানুষ রসমলাই না পেয়ে ফিরে যান। আবার অনেকে নামে চিনলেও প্রকৃত মাতৃভান্ডারের অবস্থান না জানার কারণে মহাসড়কের পাশের দোকান থেকে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লা রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফরমে থাকা দোকানগুলোও মাতৃভান্ডারের রসমালাই বলে হাজার হাজার যাত্রীদের কাছে প্রতিদিন বিক্রি করছে। এখানেও বিক্রেতারা মাতৃভান্ডারের অনুরূপ প্যাকেট ও প্লাস্টিকের পাত্রে রসমলাই সরবরাহ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বিলাস বহুল পাচঁ তারকাসহ সারা দেশের নামী-দামী সব হোটেলেই কুমিল্লা মাতৃভান্ডারের রসমলাইয়ের আলাদা কদর আছে। এছাড়াও অনেক ব্যবসায়ী এখান থেকে ক্রয় করে অন্যত্র বিক্রি করছে কিছুটা বেশি মূল্যে।
গেল একদশক ধরে কুমিল্লার কিছু অসাধূ ব্যবসায়ী মাতৃভান্ডারের আগে পিছে ময়নামতি, আদি, কুমিল্লার, দি কুমিল্লা ইত্যাদি নানা বিশেষণ লাগিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে গড়ে তোলে শতাধিক মাতৃভান্ডার নামের মিষ্টি দোকান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলো পাইকারি বা খুচরা দু’ভাবেই রসমলাই বিক্রি করছেন। চলন্ত পথের বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা মাতৃভান্ডার দেখে প্রতিদিন রসমলাই কিনছেন। পুরাতন মাতৃভান্ডারের আদলেই সব মিষ্টির প্যাকেট, প্লাস্টিকের পাত্র বানানো হয়েছে। এসব দোকানগুলোতে প্রতি কেজি রসমলাই পাইকারি সর্বনিম্ন দাম ১০০ টাকা। খুচরো দাম কেজি প্রতি ৩ শ' ২০ টাকা। অথচ মনোহরপুরের মিষ্টির দোকানে প্রতি কেজি রসমলাই ২৬০ টাকায় বিক্রি করছে। এর মান ও গুণে ক্রেতাদের আস্থা বিদ্যমান।
আব্দুল হামিদ নামের এক ক্রেতা জানান, মনোহরপুরে আসল রসমালাই পাওয়া যায়। সেখানে দামও কম। স্বাদও দারুণ। দীর্ঘসময় ভাল থাকে। কিন্তু অন্য জায়গারগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। মান খুবই খারাপ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হবার কারণে কেউ কিছু বলতে সাহস পান না। ফলে অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসন বলছে, মহাসড়কের পাশে মাতৃভান্ডার নামে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বিষয়টি সত্য। তবে তারা প্রত্যেকেই যে নামেই দোকান চালু করেছে, সেই নামেই ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে। আর এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ কোন ব্যবসায়ী প্রতারণার অভিযোগ করেননি। তাই আমরা কোনো একশনে যায়নি।
এসজে