ঢাকারোববার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

বানের পানিতে ভাসছে ছিন্নমূল মানুষেরা

নড়াইল প্রতিনিধি, আরিটিভি নিউজ

শুক্রবার, ২৭ আগস্ট ২০২১ , ১২:৩৩ পিএম


loading/img
বানের পানিতে ভাসছে ছিন্নমূল মানুষেরা

পানিতে ভাসছে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার। বিলের মধ্যে করা ঘরে দুইমাস ধরে পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৮টি পরিবার। 

বিজ্ঞাপন

অসহায় লোকগুলো ঘর উপহার পেয়েও বাস করতে পারছে না, উপরন্ত পরের বাড়িতে থাকা আর রাতে সাপের ভয়ে দিনপার করছেন তারা। প্রাকৃতিক কাজ সারছে এখানে সেখানে। শুধু এটিই নয় নিচু জায়গায় ঘর তৈরি করায় নোয়াগ্রাম এবং কুলশুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের একই দশা।

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাচুড়ি ইউনিয়নের আটঘরিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন পাশের কালডাঙ্গা, বনগ্রাম, সরকেলডাঙ্গা, আরাজী বাসগ্রাম, আটঘরিয়া, কলিমন ও আটলিয়া গ্রামের বাস্তুহারা মানুষ।

বিজ্ঞাপন

স্থায়ীভাবে পাকা ঘর এবং জমি পেয়ে সকলেই অত্যন্ত খুশি হয়ে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন, কিন্তু মাস না যেতেই সেই খুশির ঘরই এখন তাদের গলার কাটা না পারছেন ঘর ছেড়ে যেতে আবার আগের জায়গায় ফিরে যাবারও উপায় নেই। 

যশোরের নওয়াপাড়ায় একটি মিলে কাজ করতেন দিনমজুর মোস্তফা শেখ। স্ত্রী, ছেলে, ছেলে বৌ সব মিলিয়ে ভাড়ায় থেকে দিনপার করছিলেন। এলাকায় সরকার ঘর দিচ্ছে এই খবরে সব ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে ফিরে নতুন ঘরে ওঠেন। এর ওর জমিতে খেটে শেষ জীবনে এলাকার মানুষের সাথে কাটাবেন এই ছিলো স্বপ্ন। তার স্বপ্ন নষ্ট করে দিলো বিলের পানি। 

এখন নিরাপদে থাকা তো দূরের কথা, গত দুইমাস ধরে হাঁটু পানিতে চলছে তার সংসার। 

বিজ্ঞাপন

শুধু মোস্তফাই নয় ইজ্জত আলী, আসমাউল, শিল্পী, হেলাল উদ্দির এর মতো আটঘরিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৮টি পরিবারের ৭০ জন মানুষ দুইমাস ধরে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে। 

বিজ্ঞাপন

সামনে পানির মধ্যে পুরো আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো ভাসছে প্রায় ৩ ফুট পানিতে। পাশের একটু উঁচু জায়গায় চুলা তৈরি করে সেখানে পালাক্রমে রান্না চলছে, বৃষ্টিতে তাও বন্ধ হয়ে যায়। ভিতরে ঢুকতে গেলে কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও বেশি। ঘরের ভিতরে দিনরাত পানি সেচে চলেছেন নারীরা। ঘরের মধ্যে পাকা বাথরুমে হাঁটু পানি তাই রাতের বেলা এখানে-সেখানে প্রাকৃতিক কাজ সারছে নারীরা। 

একে পানিতে একাকার, এরপর অভিযোগ রয়েছে নিম্নমানের নির্মাণ। কয়েকটি ঘরের মেঝে ফেটে চৌচির। কাদা দিয়ে তা লেপে রাখার চেষ্টা চলছে। কারো ঘরে জ্বালানি আর জামাকাপড় একসাথে রাখা রয়েছে, পানিতে ভাসছে খাবারের হাড়ি। 

পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে খেয়ে আবার সেই পানিতেই হাত ধুয়ে নিচ্ছেন। এটা দিনের চিত্র, রাতের অবস্থা আরও ভয়াবহ। বিদ্যুতের ব্যবস্থা এখনও হয়নি, তাই সন্ধ্যা হলেই ঘরের মধ্যে খাটের মধ্যে সাপের ভয়ে জবুথুবু হয়ে বসে থাকেন নারীরা। ছোট শিশুদের পানিতে ডুবে যাবার ভয়ে মায়েরা জেগেই রাত কাটাচ্ছেন। বিলের পানিতে থাকা সাপ ঢুকে পড়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের পানিতে কয়েকজনকে এরমধ্যে কামড়িয়েছেন। বন্যার চেয়েও এক ভয়াবহ চিত্র এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের। 

৭০ বছরের কোহিনুর বেগম আরটিভি নিউজকে বলেন, রাস্তার উপর ছিলাম শান্তিতে ছিলাম। এখন মাঠে রান্না করে পানিতে দাঁড়িয়ে খাওয়া হচ্ছে। বাথরুমের জায়গা নেই। 

বন্যার চেয়েও ভয়াবহ পরিবেশ হলেও দেখার কেউ নেই।সরকারি ঘর পেয়েও এর ওর বাড়িতে রাত কাটাতে হচ্ছে অসহায় এসব মানুষের। আবার সেই ছিন্নমূল জীবন শুরু হতভাগ্য মানুষগুলোর। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নড়াইল জেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের মোট ৪৭৭টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

এমআই 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |