মরিয়মের বয়স তখন ছয় বা সাত। দুই বোনের সঙ্গে রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে যায় সে। পরে চিড়িয়াখানার ভেতরে ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় খুঁজতে থাকে তার পরিবার। মাইকিং করে খোঁজাখুঁজির পরও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
১১ বছর পর মায়ের বুকে ফিরেছেন মরিয়ম। ‘আপন ঠিকানা’ নামের একটি অনুষ্ঠানে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে গত রোববার (৩১ অক্টোবর) মরিয়মের সন্ধান পায় পরিবারের সদস্যরা।
মরিয়ম ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের কান্দানিয়া গ্রামের মৃত আমছর আলী ও মোছা. বেগম দম্পতির মেয়ে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে রাজধানীর মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যায় মরিয়মের পরিবারের সদস্যরা। তখন মরিয়মের বয়স মাত্র সাত বছর। বাঘ-ভাল্লুক দেখতে দেখতে একসময় সে পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে পাওয়া যায়নি। হারানোর পর কয়েকবার হাত বদল হয়ে মরিয়ম সবশেষ আশ্রয় পায় সরকারি চাকরিজীবী মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ও রাবেয়া আহমেদ দম্পতির বাসায়। দুই ছেলেমেয়ে আর মরিয়মকে নিয়ে তারা থাকতেন রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকায়। দীর্ঘ ১১ বছর নিজের মেয়ের মতোই আদর-যত্নে মরিয়মকে বড় করেছেন তারা।
মরিয়ম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হারিয়ে যাওয়ার পর এক ব্যক্তি তাকে একটি বাসায় নিয়ে যান। সেখানে কিছুদিন থাকার পর বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলেন। এরপর এক নারী রাস্তায় কাঁদতে দেখে মুসলেই উদ্দিন আহমেদ ও রাবেয়া আহমেদ দম্পতির বাসায় দিয়ে আসেন। ওই দম্পতি নিজের সন্তানের মতো দীর্ঘ ১১ বছর লালন পালন করেন। সেখানেই বড় হন মরিয়ম।
মরিয়মের মা বেগম সংবাদমাধ্যমকে জানান, তার দুই মেয়ে গাজীপুরের জয়দেবপুরে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতো। মরিয়ম সেখানের যাওয়ার পর বোন সুফলা ও লাইলীর সঙ্গে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে যায়। তারপর হঠাৎ সে হারিয়ে যায়।
মরিয়মের বড় বোন সুফলা বলেন, ছোট বোনকে হারানোর পর সবসময় মন খারাপ থাকতো। ফেসবুকে আপন ঠিকানার শেয়ার করা ভিডিও দেখে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকায় গিয়ে বোনকে ফিরে পেয়েছি। তবে বিশ্বাস ছিল, একদিন ঠিকই মরিয়ম ফিরে আসবে। আমাদের সেই আশা পূরণ হয়েছে।
এমআই