নরসিংদীর পলাশে বাড়িতে বাবার লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সিনথিয়া কবির সবকটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) মাধ্যমিক পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে এতে সিনথিয়া কবির জিপিএ ৪ দশমিক ৯৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। সিনথিয়ার এই ফলাফলে খুশি সহপাঠী ও শিক্ষকরা।
তবে পরীক্ষার পাসের খবর শুনে সবচেয়ে বেশি যিনি খুশি হতেন, সেই বাবাকে হারিয়ে পাসের আনন্দের মাঝেও শোকের কালো ছায়া রয়ে গেছে সিনথিয়ার মাঝে। দুপুরে সিনথিয়া কবির পরীক্ষায় পাসের খবর শুনে ছুটে যায় বাবার কবরের পাশে। সেখানে বাবার জন্য দোয়া করে পরিবারের সঙ্গে পাসের আনন্দ ভাগ করে নেয়।
সিনথিয়া কবির আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সময় বারবার বাবাকে মনে পড়ছিল। প্রতিবারই বাবাই আমার পরীক্ষার ফলাফল জেনে আসত। এবার বাবা নেই বলে নিজের ফলাফল নিজেই আনতে হলো।
সিনথিয়া আরও জানিয়েছেন, তার বাবার স্বপ্ন ছিল তাকে ডাক্তার বানাবে। বাবা মারা যাওয়ায় সেই স্বপ্ন আর সত্যি হচ্ছে না।
সিনথিয়ার মা সালমা আক্তার জানান, দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সিনথিয়া সবার বড়। পরিবারের আয়ের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল হুমায়ুন কবির। তাকে হারিয়ে এখন পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণেই সমস্যা হচ্ছে। মেয়ের উচ্চশিক্ষা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
পলাশ জনতা আদর্শ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক মো. মাসুদ খান আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের শতভাগ পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছে। এর মধ্যে সবার প্রথম সিনথিয়ার ফলাফল নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম। মেয়েটা বাবার মরদেহ রেখে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। ফলাফলের খবর শুনে ভাল লাগলো। সিনথিয়া অল্প কিছু নম্বরের জন্য জিপিএ ৫ পায়নি। তবে এই পরিস্থিতিতে যটতুটু ফলাফল অর্জন করেছে তা অনেক ভালো করেছে।
জনতা জুটমিল লিমিটেডের জিএম মো. গোলাম সারোয়ার জাহান বলেন, সিনথিয়ার বাবা হুমায়ুন কবির জুটমিলে কোয়ালিটি অফিসার পদে দায়িত্বে ছিলেন। মারা যাওয়ার আগের রাতেও তিনি কর্মস্থানে ছিলেন। তার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠান থেকে তাৎক্ষণিক পরিবারটিকে মাসিকভাবে আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সিনথিয়ার উচ্চশিক্ষা গ্রহণেও প্রতিষ্ঠান থেকে সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।
গত ১৪ নভেম্বও ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় হুমায়ন কবির। ওই দিন তার বড় মেয়ে সিনথিয়া কবির বাবার মরদেহ বাড়িতে রেখেই এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।
এমআই/টিআই