আধুনিক সভ্যতার এই যুগে মানুষ যখন অনলাইন গেম, মাদকে ঝুঁকছেন ঠিক তখনই মানুষকে বই পড়ার প্রতি আকৃষ্ট করে তুলেছেন ‘বই বৃক্ষ’। নেই অফিস নেই চেয়ার-টেবিল। বই বৃক্ষের গ্রুপে লিস্ট দেওয়া থাকে কি কি বই তাদের কাছে আছে সেখান থেকে পাঠককে পছন্দের বইটা বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে কমেন্ট করতে হয়।
যার যখন বই পড়তে ইচ্ছে হবে জানিয়ে দিবে ফেসবুক গ্রুপে ব্যাস। এক দিনের মধ্যে বই বৃক্ষের সমন্বয়করা বিনামূল্যে পাঠকের বাসায় পৌঁছে দেন বই। আর চমৎকার এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের নাম ‘বই বৃক্ষ’। তাদের স্থায়ী সদস্য সংখ্যা তিনশ’রও বেশি। এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে এখন পর্যন্ত বই পড়ছেনে ৫ হাজার ১৬১ জন পাঠক।
বই বৃক্ষের উদ্যোগ নেন রমজান আলী (ইমন), খশরু, মেহেদী হাসান, আব্দুর রাফি, নাসিম রেজা। উদ্যোগটির মূল ভূমিকায় আছেন রমজান আলী। তিনি ঢাকা কলেজের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। বই পড়া ও সংগ্রহ করা ছিল নেশা। ছাত্রাবাসের নবীন-বরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় ঘোষণা দেন তার কাছে ৩০টি বই আছে। কেউ পড়তে চাইলে তিনি দিতে চান তবে ফেরত দিতে হবে। শুরু হলো বই নিয়ে আলোচনা। বন্ধুরা উপহার দিল ৫০টি বই। এভাবেই বই বৃক্ষ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে।
ফেসবুক গ্রুপ চালু হওয়ার পর নওগাঁর সাপাহার উপজেলার তরুণ-তরুণীদের বই নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এলাকায় সাড়াও মেলে ব্যাপক। এরপর পাঠক চাহিদার জন্য একে একে আশড়ন্দ, নজিপুর, ধামইরহাট, নওগাঁ জেলা সদর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও সবশেষে দিনাজপুরে তাদের শাখা চালু হয়েছে। এছাড়াও আগামী বছর আরো ২৮টি শাখা চালু করবে বই বৃক্ষ। প্রতি মাসে পাঠক সংখ্যা ৩৫০ জনেরও বেশি। এখন এই সংগঠনের নিজস্ব বইয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৭৯ টি। শিশুদের জন্য রয়েছে ৭টি শাখায় শিশু কর্নার।
বই বৃক্ষের পাঠক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্রী সাদিয়া সিনথিয়া জানান, আগে কখনো শ্রেণির বই ছাড়া অন্য বই পড়েননি। বই বৃক্ষের মাধ্যমে সে বই পড়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়। এইচএসসি পরীক্ষার পর মাত্র এক মাসে ৩০টি বই পাঠ করেন তিনি। এবছর তাকে সেরা পাঠক হিসাবে পুরস্কার প্রদান করেন বই বৃক্ষ।
বই বৃক্ষের উদ্যোক্তা রমজান আলী জানান, সবার সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে বই বৃক্ষ। সংগঠনটি দাঁড় করানোর জন্য শুধু রাজশাহী শহরে তারা সশরীরে কাজ করেছেন। এরপর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বইপড়ার আন্দোলন এক শহর থেকে আরেক শহরে ছড়িয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, আগামী বছর ওয়েবসাইট চালু করার ইচ্ছে তাদের। সাইটে সব শাখা আলাদা থাকবে যে শাখায় যে বই থাকবে সব বইয়ের তালিকা দেখা যাবে। বই বৃক্ষে যোগ করা হবে দেশের বাইরে ২টি শাখা চায়না ও অস্ট্রেলিয়া। এভাবেই ডালপালা মেলতে থাকবে বই-প্রেমীদের এই সংগঠন। কৃতজ্ঞ সবার প্রতি। সকল বই পোকাদের অপেক্ষায় বই বৃক্ষ।
জিএম