যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম মাজহারের বিরুদ্ধে ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (৪ এপ্রিল) রাতে মোবাইল ফোনে হুমকির কথোপকথনের একটি অডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ৬ মিনিট ৮ সেকেন্ডের অডিওর একপর্যায়ে মাজহারুল ইসলাম প্রধান শিক্ষককে বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিটি যদি আবেদন না করে, তাহলে আপনি যদি যশোর থাকতে পারেন, আমি চুড়ি পরে যশোরে ঘুরে বেড়াব।’
অডিওতে যুবলীগ নেতা আরও বলেন, ‘তুই কীভাবে যশোর থাকিস আমি দেখব। তুই যদি থাকতে পারিস, আমি আর যশোরে রাজনীতি করব না। তোর চাকরি থাকে কি না দেখিস। তোরে এতদিন কিছু বলিনি। এত দিন ভদ্রতা দেখাইছি। তুই আমার স্যার তাই। এখনও অভদ্রতার কিছু দেখিসনে তুই। (অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে) তুই জামায়াত করে এখনও এ জায়গায় আছিস তোর কপাল ভালো’ বলে ফোন কেটে দেন এই যুবলীগনেতা।
ভুক্তভোগী শিক্ষকের করা জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সদর উপজেলার ইছালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আগের কমিটির অগোচরে যুবলীগ নেতা মাজহার ও তার সহযোগীরা অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে মনিরুজ্জামানকে নিযুক্ত করেন। এতে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবকরা ওই কমিটির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনাসহ একজন অভিভাবক হাইকোর্টে মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে।
এরপর গত ২৪ মার্চ দুপুর ২টার দিকে যুবলীগ নেতা মাজহার তার মোবাইল নম্বর থেকে প্রধান শিক্ষককে ফোন দিয়ে কমিটি অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে বলেন। তাকে কমিটির বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে জানালে গালাগালসহ জীবননাশের হুমকি দেন। ওই জিডির মাধ্যমে নিরাপত্তা চেয়ে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে সোমবার (৪ এপ্রিল) রাতে যুবলীগ নেতা মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামের হুমকির কথোপকথনের অডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
অডিওটি তার বলে নিশ্চিত করেছেন অভিযুক্ত সদর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম মাজহার। তবে ভাইরাল হওয়া অডিওটিতে তার কথোপকথনে কিছু কথা এডিট করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে মনিরুজ্জামানকে নিযুক্ত করতে ডিও লেটার দেন। তারপরও প্রধান শিক্ষক কমিটির আবেদন করছে না। আমি স্থানীয় এমপির এই ইছালী ইউনিয়নে প্রতিনিধিত্ব করি। বারবার প্রধান শিক্ষকের কাছে গেলে তিনি মামলার অজুহাত দিয়ে কমিটির আবেদন করছেন না। তাই উত্তেজিত হয়ে প্রধান শিক্ষককে বেশ কিছু কথা বলেছি। স্যারকে যা কিছু বলেছি সব রাগের মাথায় বলেছি। তবে ভাইরাল হওয়া অডিওটিতে কিছু এডিট করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
নাম না প্রকাশের শর্তে তার এক স্বজন জানান, মাজহারুল ইসলাম ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও স্থানীয় সংসদ এবং উপজেলা পরিষদের অনুসারী হওয়ায় প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামের পরিবারের সকল সদস্যরা বর্তমানে আতংকে ও জানমালের নিরাপত্তায় রয়েছেন। দ্রুত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।