নরসিংদীর রায়পুরায় মসজিদে ইমামের পেছনের সারিতে বাবার সঙ্গে এক কন্যাশিশু দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের জেরে কৃষককে কুপিয়ে জখমের পর হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নিহতের মামা আলাল উদ্দিন বাদী হয়ে গত রোববার (১০ এপ্রিল) রায়পুরা থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে গত রোববার বিকেলে জসিম নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে গতকাল সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বাহাদুরপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম তার চার বছরের মেয়ে নুসরাতকে নিয়ে মাগরিবের ওয়াক্তে বাড়ির পাশের মসজিদে যান। জামাত শুরু হলে মেয়েকে নিয়ে ইমামের পেছনের সারিতে দাঁড়ান। এ নিয়ে আপত্তি তোলেন প্রতিবেশী আলা উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন। এরই জেরে নামাজের পর দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আলা উদ্দিনকে মারধর করেন নুরুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা।
আলা উদ্দিনকে মেরে আহত করার সংবাদ শুনে রাতে তাকে দেখতে আসেন ভাগনে লাল চাঁন। মামার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাত ১০টার দিকে নুরুল ইসলাম, জুয়েল, মুক্তার ও অলি মিলে লাল চাঁনের মাথায় উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করেন। তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠান। সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা লাল চাঁনকে ঢাকায় পাঠাতে বলেন। রাজধানীর উত্তরার শিন শিন জাপান হাসপাতালে তিন দিন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার দুপুরে মারা যান লাল চাঁন।
লাল চাঁনের মামা আলা উদ্দিন বলেন, নাবালক একটি মেয়ে ইমামের পেছনে দাঁড়ানো নিয়ে কথা বলায় মেয়েটির বাবা নুরুল আমাকে প্রথমে গালি দেয়। পরে চড়থাপ্পড় ও মারধর করে। রাতে ভাগনে লাল চাঁন আমাকে দেখে বাড়ি যাওয়ার পথে নুরুল ও তার লোকজন মিলে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আড়ো প্রধানবাড়ির মসজিদের ইমাম মো. মোফাজ্জল বলেন, একটি মেয়ে শিশু আমার পেছনের সারিতে দাঁড়ানো নিয়ে দুজন মুসল্লির মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। এ মসজিদে আমি নতুন, তাই ওই দুজন ব্যক্তির নাম পরিচয় জানি না। রাত ১০টার দিকে মসজিদের বাইরে ঝগড়ার শব্দ শুনেছি। তারপর কী হয়েছে জানি না।
স্বামীর মৃত্যুর পর লাল চাঁনের স্ত্রী সাত দিনের সন্তান কোলে নিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমার স্বামী তো কোনো ঝগড়াঝাটিতে ছিল না। কী অপরাধ ছিল তার? চার সন্তান নিয়ে কী করে সংসার চলবে!
অভিযুক্ত নুরুলের মা মনোয়ারা বলেন, রাতে ছেলের সঙ্গে চার বছরের নাতি নুসরাত মসজিদে গিয়েছিল। এ নিয়ে আলা উদ্দিনের সঙ্গে ঝগড়া হয়। এ ঘটনায় আমার ছেলে নুরুল, মেয়ে আমেনা ও ভাশুরের ছেলে জুয়েল আহত হয়েছে। এর বেশি কিছু জানি না।
এ ব্যাপারে রায়পুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোবিন্দ সরকার জানান, লাল চাঁনের পরিবারের পক্ষ থেকে শনিবার একটি মারধরের অভিযোগ করেছে। নিহতের মামা বাদী হয়ে অভিযোগ করেন। এ ঘটনার একজনকে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশি চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।