কুড়িগ্রামে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির তালিকায় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং সরকারি চাকরিজীবীদের আত্মীয়-স্বজনদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রকৃত সুবিধাভোগীদের নাম বাদ দিয়ে সচ্ছলদের নামে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নে ২০২১-২২ অর্থবছরের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। হতদরিদ্রদের পাশাপাশি সচ্ছল ব্যক্তিদের নামের তালিকা করা হয়েছে। ইউনিয়নের সাড়ে ৩০০ হতদরিদ্রের তালিকায় অর্ধশতাধিক নামের বিপরীতে অনিয়ম হয়েছে।
এসব তালিকায় ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামের ভাই হাবিবুল ও মোহাম্মদ আলী, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আবদুল কাদেরের ছেলে সাহাজুল আলম, এনামুল হক, পুত্রবধূ তাহমিনা বেগম, আদুরি বেগম, ৭ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মোকারুল ইসলাম এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা, ছোট ভাই দিনাজপুরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাকারিয়া সরকার এবং ভাতিজা খোরশেদের নাম রয়েছে।
ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে মাটি কাটার ৬০ দিনের কাজ দেখিয়ে জনপ্রতি ৪০০ টাকা হারে দিন মজুরির টাকা তোলা হয়েছে। তালিকাভুক্ত এসব ব্যক্তি কখনোই ওই প্রকল্পে কাজ করেননি। তালিকায় অন্তর্ভুক্ত অনেকের মোবাইল সিম ইউনিয়ন সচিব মাহাফুজার রহমান নিজের কাছে রেখে সেই টাকা উত্তোলন করারও অভিযোগ মিলেছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এমন অবৈধ কাণ্ডে ক্ষুব্ধ ইউনিয়নের দরিদ্ররা।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা তালিকায় দেবর ও নিজের নাম থাকার কথা স্বীকার করে জানান, মজুরির টাকা কে পায় সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
ইউপি মেম্বার আবদুল কাদের বলেন, মেম্বারেরও তো খরচ আছে, বিভিন্ন স্থানে খরচ করতে হয়। তাই সেই খরচের জন্য দু-একটা নাম দেওয়া হয়।
বাহুবল গ্রামের বাসিন্দা সুবিধাভোগী সরিফা বেগমের স্বামী মোজাম্মেল হক বলেন, আমার বউয়ের নাম দেওয়া আছে। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় আমি ৪০ দিনের মাটিকাটার কাজ করেছি। প্রথম দফা ৪০ দিন এবং দ্বিতীয় দফায় ২০ দিনের কাজ করে ৪০০ টাকা হারে ৬০ দিনের ২৪ হাজার টাকা পেয়েছি।
বাহুবল গ্রামের বাসিন্দা সরিফা বেগমের স্বামী মোজাম্মেল হক বলেন, আমার বউয়ের নাম দেওয়া আছে। সে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় আমি ৪০ দিনের মাটিকাটার কাজ করেছি। প্রথম দফা ৪০ দিন এবং দ্বিতীয় দফায় ২০ দিনের কাজ করে ৪০০ টাকা হারে ৬০ দিনের ২৪ হাজার টাকা পেয়েছি।
একই এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা বলেন, মাটিকাটার কাজে আমার নাম ছিল, চেয়ারম্যান নিজেই বলেছেন। কোদাল-ডালি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে শুনি আমার নাম কেটে দিছে। এখন দেখি চেয়ারম্যানের ভাই, সরকারি চাকরি করে তার বউ-ভাইয়ের নাম তালিকায় আছে। আমার চেয়ে তারাই গরিব বেশি। তারাই খাক।
ইউনিয়ন আনসার ভিডিপির ইউনিয়ন কমান্ডার মোহাম্মদ আলী ভোলা বলেন, তালিকায় চেয়ারম্যানের ভাই, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার, ৩ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বারের ছেলে ও পুত্রবধূর নামসহ ইউনিয়ন সচিবের ঘনিষ্ঠজনদের নাম রয়েছে। গরিব এলাকার অনেক হতদরিদ্রের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
নুনখাওয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, বিধিমোতাবেক ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের নেওয়া যায় না। কিছু শ্রমিকের নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য এমনটি হয়েছে।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর আহমেদ মাছুম বলেন, তালিকা প্রিন্ট করে ইউনিয়নের ডোর টু ডোর যাচাই করা হচ্ছে। তালিকায় অসঙ্গতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।